বৃহস্পতিবার নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি তুলে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর রবিবারেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসককে বদল করে দিল নবান্ন। ঘটনাচক্রে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি আসনেই পরাজিত হয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। কালীঘাটের বৈঠক শেষে শনিবার কাঁথি ও তমলুকে হারের জন্য নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই আসনগুলিতে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও আইসিদের সরিয়ে দিয়ে ষড়যন্ত্র করে হারানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। রবিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসক জয়োশী দাশগুপ্তকে কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতরের বিশেষ দায়িত্বে আনা হয়েছে।
ভোট চলাকালীন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসক তনভীর আজমলকে সরিয়ে জয়োশীকে দায়িত্ব দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরেই জেলাশাসককে নবান্নে আনা হচ্ছে। তবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসক পদে তনভীরকে ফিরিয়ে আনা হবে কি না, তা নবান্ন স্পষ্ট করেনি। অধিকারী পরিবার যত দিন তৃণমূলে ছিল, তত দিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি ও তমলুক আসন থাকত শাসকদলের দখলে। বাম জমানার শেষ দিকে এই জেলার দু’টি আসন জিততে শুরু করে তৃণমূল। তমলুক আসনে শুভেন্দু ও কাঁথি আসনে সাংসদ হন তাঁর বাবা শিশির অধিকারী। ২০১৪ সালেও এই পিতা-পুত্রই ফের সাংসদ হন। কিন্তু ২০১৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুকে রাজ্য মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনেন। বদলে উপনির্বাচনে সাংসদ হন তাঁর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। ২০১৯ সালেও শিশির-দিব্যেন্দু লোকসভা নির্বাচনে নিজ নিজ আসন থেকে জয় পান। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগদান করলে সেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে শিশির ও দিব্যেন্দু প্রার্থী হননি। বদলে কাঁথি আসনে প্রার্থী হন শিশিরের কনিষ্ঠ পুত্র সৌমেন্দু অধিকারী। এই আসনে তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিককে ৪৭ হাজার ৭৬৪ ভোটে জয়ী হয়েছেন। আর তমলুকে তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যকে হারিয়ে সংসদে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই দুই আসনে বিজেপির জয় নিয়ে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগের সুরে তিনি বলেছেন, ‘‘আরও ৩-৪টি আসন আমরা জিততে পারতাম। পূর্ব মেদিনীপুরে আসন লুট হয়েছে। জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, আইসি-দের ভোটের আগে সরিয়ে দিয়েছে। লোডশেডিং করে যে সিট হারিয়ে দিয়েছে, আগে দেখেছি। এর পর দেখব কাকে কী দায়িত্ব দেয় আর গ্যারান্টি বলে যা যা করেছে, সেটা কবে হয়।”
শনিবার কালীঘাটের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের পরেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের রদবদলের ইঙ্গিত মিলেছিল। ঠিক তারপর দিনই সরিয়ে দেওয়া হল জেলাশাসককে।