গত ৬ জুন নির্বাচন কমিশনের তরফে তুলে দেওয়া হয়েছে নির্বাচন বিধি। এর পরেই রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের অন্দরে তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পুলিশ এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন স্তরে বদলির নির্দেশিকা জারির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। উঁচু পর্যায় থেকে নিচুতলা অবধি অফিসারদের একাংশ বদলি হবেন। উত্তরবঙ্গের ছ’টি আসনে সার্বিক হারের পরে শাসক দলের দলীয় স্তরে জেলায় জেলায় পুলিশ প্রশাসন নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। তাতে আগামী ২০২৬ সালের ভোট মাথা রেখেই অফিসারদের বদলি বা পোস্টিং করা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ভোটের প্রচারের সময়ই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন জেলার পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে খোঁজখবর নেন। আইসি, ওসি থেকে জেলা পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনার বা বিভিন্ন ডিএসপি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কী করছেন তা শুনেছেন। বিশেষত, কমিশনের নির্দেশে কাজ, নাকি কোনও দলের দিকে ঝুঁকে কাজকর্ম হয়েছে তার খোঁজ নেওয়া হয়েছে। কোচবিহারে প্রচারে গিয়ে পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। গত শনিবার কালীঘাটের বৈঠকের পর নেত্রীর অভিযোগ, কমিশন জেলাশাসক, আইসিদের সরিয়ে নিজের মতো নানা কায়দায় ভোট করিয়েছে। এতে ধরে নেওয়া গিয়েছে, পুলিশ প্রশাসনের রদলবদল আসন্ন।
তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের অন্যতম এক নেতার কথায়, ‘‘প্রতি ভোটের আগে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন কিছু বদলি করে। পরে রাজ্য সরকার আবার নিজেদের মতো করে বদলি করায়। এটা হয়ে আসছে। এ বার সেখানে কোন জেলায় কোন অফিসার কেমন কাজ করেছেন তা বিবেচিত হচ্ছে।’’
বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারি কর্মীদের আনুগত্য পেতেই বিভিন্ন নির্দেশিকা জারি করা হবে। যাঁরা শাসক দলের কথায় কথা মিলিয়েছেন তাঁরা ভাল জায়গায় আসবেন। নইলে অনেককেই এক জেলা থেকে আর এক জেলায় বদলি করা হতে পারে।
সরকারি সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে জয় এলেও বেশ কিছু পদে বদল হতে চলেছে। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির পর দার্জিলিং এবং শিলিগুড়ি পুলিশ নিয়ে নবান্ন এই সময়ে খুব একটা খুশি নয়। বিশেষ করে শিলিগুড়ি সমতলের তিনটি বিধানসভায় দলের ভরাডুবি হওয়ায় নানা প্রশ্ন সামনে এসেছে। ভোট শান্তিতে ভোট পার করার পর পুলিশের তরফে একটা পার্টিও হয় শিলিগুড়িতে, যার খবর কলকাতা অবধি গিয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দার্জিলিং পুলিশের সক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরের হাল এক। প্রাক্তন এক পুলিশ কর্তা মালদহে হারার পর কলকাতায় রিপোর্ট দেন। দলের একাংশ জানান, প্রতিটি কেন্দ্রের ফলাফলে নানা হিসেবনিকেশ করেই বদলি শুরুর সম্ভবনা শুরু হয়েছে।