দু’ঘণ্টা হয়ে গেল, শিয়ালদহ স্টেশনেই বসে রয়েছি। ট্রেন কখন ছাড়বে, আদৌ ছাড়বে কি না কিছুই বুঝতে পারছি না। স্টেশনের মাইকে ঘোষণা করলে তা-ও বোঝা যায়, কিন্তু সেটাও হচ্ছে না। সঙ্গে ভারী ভারী ব্যাগ রয়েছে। এই অবস্থায় ব্যাগ রেখে কোথায় যাব? অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
কাজের সূত্রে আমি মুম্বইয়ে থাকি। বাড়ি বনগাঁয়। প্রায় বছরখানেক পর বাড়ি ফিরছি। বাড়ির সবাই বলেছিল, ট্রেনে গোলমাল চলছে। ঠিক মতো ছাড়ছে না। কিন্তু এমন অবস্থা হবে, তা কী করে জানব? ভেবেছিলাম, এক-দেড় ঘণ্টা দেরি হবে। কিন্তু এ তো দেখছি ট্রেনের চাকাই গড়াচ্ছে না। যেখানে দুপুরের আগে বাড়ি চলে যাওয়ার কথা, সেখানে সন্ধ্যায়ও বাড়ি ঢুকতে পারব কি না, জানি না।
সকালে হাওড়ায় নেমে যখন শিয়ালদহে আসি, তখন প্রায় দশটা। স্টেশনের ভিতরে ঢুকে দেখি গিজগিজ করছে লোকজন। চলাফেরা করব কী, ঠিক মতো দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। ওই অবস্থায় কেউ শুয়ে রয়েছেন। কেউ প্লাস্টিক পেতে প্ল্যাটফর্মের সামনে বসে পড়েছেন। কোনও মতে জিনিসপত্র নিয়ে আমিও ছয় নম্বর প্ল্যাটফর্মের মুখে এসে বসে পড়ি। গরমের মধ্যে তখন থেকে এক জায়গায় বসে রয়েছি। এখন বারোটা বাজতে চলল, বনগাঁ লোকালের দেখা নেই। যা দু’-একটি ট্রেন দিচ্ছে, তাতে প্রবল ভিড়। দেখেই ভয় লাগছে। উঠতে পারব বলে মনে হয় না।
মাঝে কেউ এক জন বলেছিলেন, দমদম থেকে লোকাল ট্রেন ছাড়ছে। ভেবেছিলাম, দমদমে গিয়ে ট্রেন ধরব। এখানে এক জনকে ব্যাগপত্তর দেখার কথা বলে দমদম জংশনে যাওয়ার জন্য শিয়ালদহের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির দরদাম করতে গিয়েছিলাম। যে দর হাঁকল, তা শুনে মাথা ঘোরার জোগাড়। এই টুকু পথ যেতে দেড় হাজার টাকা চাইছে! কে দেবে এত টাকা? শুনেই আবার স্টেশনে চলে এসেছি। মানুষের বিপদ বুঝে ওঁরা সুযোগ নিচ্ছেন। বদল হল না পুরনো এই রোগের।
মুম্বই থেকে বেরিয়েছি প্রায় দেড় দিন আগে। এক্সপ্রেসে না হয়েছে ভাল করে খাওয়া, না হয়েছে ঘুম। ভেবেছিলাম, কলকাতায় পৌঁছে গেলে তো আর ভয় নেই। লোকালে চাপলেই দু’ঘণ্টায় বাড়ি। কিন্তু শিয়ালদহে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে বসেই দু’ঘণ্টা কেটে গেল। এখনও স্টেশনে যা ভিড় দেখছি, বাড়ি ফেরার ট্রেন দিলেও তাতে আদৌ উঠতে পারব কি না, ভাবছি। মনে হচ্ছে, কয়েকটি ছেড়ে তার পরে ট্রেনে উঠতে হবে। বাড়ির লোক বলেছিল, আমাকে নিতে আসবে। ওরাও যদি আসত, কী হত তা-ই শুধু ভাবছি।