আলু খান না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। রান্নাঘরের অপরিহার্য ওই আনাজের যাত্রা শুরু হয়েছিল গঙ্গাপারের হুগলি থেকে।
ইতিহাস বলছে, সপ্তদশ শতকে পর্তুগিজদের হাত ধরে ভারতে এসেছিল আলু। কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিমের মালাবার উপকূলের সামান্য এলাকায় তা সীমাবদ্ধ ছিল। হুগলিতে পর্তুগিজ প্রভাব থাকলেও আলু চাষ বাংলায় ছড়ায় ইংরেজদের হাত ধরে। দেশ স্বাধীন হওয়ার ১০০ বছর আগে, ইংল্যান্ডে প্রকাশিত একটি কৃষিভিত্তিক পত্রিকায় সেই উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায়। কিন্তু গোটা বাংলায় আলু প্রথম দিকে জনপ্রিয় হয়নি। হেবার সাহেবের জার্নালে তার উল্লেখ রয়েছে। তখন, আলু বাঙালির প্রিয় ছিল না। তদানীন্তন বাংলার হুগলিই প্রথম আলুকে আপন করে নেয়। তার ফলে মেলে পুরস্কারও।
সেটা ১৯৫৩ সালের ২৪ জানুয়ারি। স্বাধীন ভারতে প্রথমবার চাষিদের পুরস্কৃত করা হল। তা-ও এমন ফসলের জন্য, যা সাগর পার থেকে এসে বাংলার অন্যতম প্রধান ফসল হয়েছিল। বাঙালির ঘরে তখন তার অফুরন্ত দাপট। গরিবের সংসারে ভাতের হাঁড়িতে সেই আনাজ ফুটিয়ে নিলেই কেল্লাফতে। দ্রুত ‘স্বদেশি’ হয়ে উঠেছে আলু। একে দেশের প্রথম ‘কৃষক পুরস্কার’ তা-ও আবার ভিনদেশি আলুর জন্য, ইতিহাস তৈরি হয়েছিল সে বছরের প্রথম পর্বেই।
‘হুগলি জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ’ গ্রন্থে লেখক সুধীরকুমার মিত্র সে দিনের পুরস্কৃত চাষিদের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন—জানুয়ারির দুপুরে শ্রীরামপুরের ঐতিহাসিক টাউন হলের সামনে অপেক্ষারত ছিলেন কৃষকরা। সে দিন, প্রথম পুরস্কারের ৪০০ টাকা পেয়েছিলেন হরিপালের গিরীন্দ্রনাথ সাহা। তিনি একরে ৫৬৩ মণ ও ৪ সের আলু ফলিয়েছিলেন। দ্বিতীয় পুরস্কারের ২৫০ টাকা পেয়েছিলেন চণ্ডীতলার বনমালীপুরের দু’কড়ি ঘোষ। তিনি একরে ৫১১ মণ আলু ফলিয়েছিলেন। একরে ৪৯১ মণ ও ১ সের আলু ফলিয়ে তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে কড়কড়ে ১৫০ টাকা পকেটস্থ করেছিলেন শ্রীরামপুরের সুবলচন্দ্র পাড়ুই। ১৯৫৩ সালে পুরস্কার দেওয়া হলেও ফলনবর্ষ ছিল ১৯৫১-৫২ সাল। হুগলির কৃষক মহল্লাকে ১৯৫১ সালেই প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেওয়া হয়।... কার্যত গোটা হুগলির প্রায় প্রতিটি বর্ধিষ্ণু জনপদের কৃষকেরা প্রতিযোগিতার ময়দানে ছিলেন।
রাজ্য তথা দেশের অন্য এলাকার চাষিরা যে ওই প্রতিযোগিতায় যোগ দেননি, এমন নয়। কিন্ত হুগলির চাষিদের সঙ্গে তাঁরা সে দিন এঁটে উঠতে পারেননি।