কাজের পাশাপাশি, নরেন্দ্র মোদীর সাজ নিয়েও চর্চা কম হয় না। তৃতীয় বারের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথবাক্য পাঠ করার সময়েও তাই নজর থাকল তাঁর বেশভূষায়। প্রজাতন্ত্র দিবস হোক বা স্বাধীনতা দিবস— সাজপোশাকে আলাদা একটা চমক তাঁর থাকেই। রবিবারের সন্ধ্যায় মোদীর পোশাকনামায় আলাদা চমক থাকল কি?
খানিকটা তো থাকল বটেই। এ দিনের সাজ নিয়ে কৌতূহল ছিল অনেকেরই। সেই কৌতূহলের নিরসন হল সন্ধ্যা সাতটা বেজে উনিশ মিনিটে। রাইসিনা হিলসের দরজায় এসে থামল কালো আর ছাইরঙা মার্সিডিজ়। গাড়ির দরজা খুলে নামলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তার পরেই নীল-সাদার চমক। সব কিছুই অত্যন্ত মাপা, পরিকল্পনামাফিক। যেমন হয়ে থাকে। কিন্তু এত জমকালো অনুষ্ঠানের মাঝে আলাদা করে নজর কাড়ল মোদীর সাজ। কেমন সাজলেন তিনি?
নীল-সাদায় সাজলেন
পরনে শ্বেতশুভ্র পাঞ্জাবি-পায়জামা। পাঞ্জাবির উপরে আকাশরঙা জওহর কোট। সেই কোটের বুকপকেটে গোঁজা কলম। পোশাক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে যে তিনি ভালবাসেন, তা এত দিনে জেনে গিয়েছে দেশবাসী। নানা সাজ, নানা রূপে মাঝেমাঝেই তাঁকে দেখা যায়। নিন্দকেরা অবশ্য বলেন এ সবই রাজনৈতিক কৌশল। সেই ভাবনায় মাঝেমাঝে মোদী নিজেই ইন্ধন জুগিয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের ঐতিহ্যকে মাথায় রেখে সাজসজ্জা করে। তবে তাঁর পোশাকনামা নিয়ে চর্চা কমেনি। বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে একেবারে ছিমছাম তিনি। ধবধবে পাঞ্জাবিতে কোনও মোটিফ নেই। কারুকার্য নেই তাঁর নীলরঙা কোটেও। সাজ সাদামাঠা হলেও তাঁর উপস্থিতির গাম্ভীর্যে ভরে উঠল চারপাশ।
ঘড়ি পরলেন না?
রাজনৈতিক কর্মসূচি হোক কিংবা জঙ্গল সফর— মোদীর বাঁ হাতের কব্জিতে ঘড়ি থাকে। কখনও সেটা স্মার্ট ওয়াচ, কখনও আবার চেন দেওয়া। তবে রবি-সন্ধ্যায় মোদীর হাতে ঘড়ি দেখা গেল না। সাদা পাঞ্জাবির লম্বা হাতা কব্জির মুখে বোতামবন্দি হয়েছে। ঘড়ি থাকলেও পাঞ্জাবির হাতায় তা ঢাকা পড়লেও পড়তে পারে। তবে সে সুযোগ কম।
চোখমুখে কিসের জেল্লা?
তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়ার আত্মশ্লাঘা, না কি কোনও ট্রিটমেন্ট করিয়েছেন— রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় তাঁর ‘গ্ল্যামার’ নিয়ে অনেকেই মনে মনে সম্ভাব্য কারণ খুঁজলেন। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ভোটের ফলপ্রকাশের দিন মোদীকে খানিকটা আনমনা দেখাচ্ছিল। মুখে কিছু না বললেও অনেকেরই মনে হয়েছিল, ভোটের ফলাফল তাঁকে খানিকটা আশাহত করেছে। তবে সে দিনের সেই চিন্তার ছাপ অনেকটাই কেটে গিয়েছে মোদীর মুখমণ্ডল থেকে।
রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে যেখানেই তিনি যান, পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী বদলে যায় তাঁর পোশাক। দীপাবলি পালন করতে সীমান্তের সেনাঘাঁটিতে যখন যান, তখন তিনি ধারণ করেন রণসজ্জা। আবার চিতা দেখতে অভয়ারণ্যে গেলে তাঁর পরনে থাকে বনসজ্জা। রণসজ্জা থেকে বনসজ্জা— সবেতেই তিনি সাবলীল। জলেও কম স্বচ্ছন্দ নন তিনি। লাক্ষাদ্বীপে আপাদমস্তক কালো পোশাকের উপর কোমরে কমলা রঙের জ্যাকেট বেঁধে সমুদ্রের জলে তাঁর অবগাহনের ছবি গোটা দেশ দেখেছে। সেই তিনিই ছিমছাম, সাদামাঠা, সাধারণ সাজেই রবি-সন্ধ্যায় জন্ম দিলেন নতুন চর্চার।