তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল হাওড়ার শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের দাশনগর এলাকা। রবিবার গভীর রাতে দাশনগরের বেহারাপাড়া এলাকায় তৃণমূলের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি আয়োজিত বিজয় সম্মেলনে খানাপিনাকে কেন্দ্র করে দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। আক্রান্ত হন দু’পক্ষের চার জন। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় তৃণমূলের শিবপুর কেন্দ্রের ব্লক সভাপতি মহেন্দ্র শর্মার ছেলে অভিষেক শর্মা ও সঞ্জয় আঢ্য নামে এক তৃণমূল কর্মীকে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছে। রডের আঘাতে অভিষেকের মাথা ফেটেছে। সঞ্জয়কে গুরুতর আহত অবস্থায় হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আহত হয়েছেন এলাকার দুই মহিলাও। এ দিন দু’পক্ষ অভিযোগ দায়ের করার পরে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
লোকসভা ভোটের আগেই শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল। নির্বাচনী সভায় ওই কেন্দ্রের মনসাতলায় দলীয় কর্মীদের কাছ থেকেই ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি শুনতে হয় তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারিকে। তবে, ভোটের পরে মনোজ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিয়ো-বার্তায় প্রকাশ্যেই প্রসূনের বিরুদ্ধে দল-বিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগ তোলেন। রবিবার রাতে মনোজ-ঘনিষ্ঠ মহেন্দ্রর উপস্থিতিতে দাশনগরের বেহারাপাড়ায় বিজয় সম্মেলনে সংঘর্ষ শুরু হয় দু’দলের মধ্যে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই রাতে মহেন্দ্রের নেতৃত্বে প্রায় ৫০০ জন কর্মীর জন্য খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ যখন সকলে বাড়ি ফিরছেন, তখন মহেন্দ্র-বিরোধী কিছু বাসিন্দা রাস্তায় জড়ো হয়ে অভিযোগ করেন, কিছু মত্ত যুবক ওই আসর থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তার পাশে দালানে বসে থাকা মহিলাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করেছে। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষ বাঁশ, লাঠি, রড নিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করে। তাতে চার জন আহত হন। অভিযোগ, ওই সময়ে মহেন্দ্রের ছেলেকে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়। তাঁকে বাঁচাতে গেলে আহত হন সঞ্জয়। ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে দাশনগর থানার পুলিশ। কিন্তু অভিযোগ, সোমবার সকালে বেহারাপাড়ার কিছু তৃণমূল সমর্থক থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁদের বাঁশ নিয়ে তাড়া করে অপর পক্ষ। ঘটনাস্থলে নামানো হয় র্যাফ ও বিশাল পুলিশ বাহিনী।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মহেন্দ্র বলেন, ‘‘কাল আমার উপস্থিতিতেই ঘটনাটি ঘটেছে। আক্রমণকারীরা আমাদের দলের লোক। যারা এ বার আমাদের হারাতে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। আসলে প্রার্থীর বিপুল জয় ওরা মানতে পারছে না। ওদের মদতেই পরিকল্পিত ভাবে কিছু লোক কর্মীদের উপরে হামলা চালিয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেও বিষয়টি জানিয়েছি।’’ ঘটনাস্থলে এ দিনও উত্তেজনা থাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।