• ইজরায়েলি বন্দিশিবিরে প্যালেস্টাইনিদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন
    আজকাল | ১২ জুন ২০২৪
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের একটি তদন্তে ইজরায়েলের বন্দিশিবিরে আটক প্যালেস্টাইনিদের নিপীড়ন-নির্যাতনের রোমহর্ষ চিত্র উঠে এসেছে। ওই শিবিরের প্রাক্তন বন্দি, ইজরায়েলের সামরিক কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও সেনাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তিন মাস ধরে এ তদন্তকাজ পরিচালনা করা হয়। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শিবিরটিতে বন্দি আছেন চার হাজারের মতো প্যালেস্টাইনি।‘এসদে তেইমান’ নামে বন্দিশিবিরের অবস্থান দক্ষিণ ইজরায়েলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে। শিবিরটি প্যালেস্টাইনের গাজা উপত্যকা থেকে দখলদার ইজরায়েলি সেনাদের হাতে আটক হওয়া লোকজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের কাজে ব্যবহৃত একটি অস্থায়ী স্থাপনা।ইজরায়েলি আইনে এই বন্দিদের বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ৭৫ দিন পর্যন্ত কোনও আইনজীবী বা বিচারের মুখোমুখি করা ছাড়া ৯০ দিন পর্যন্ত আটকে রাখার বিধান আছে। তাদের অবস্থানস্থল সম্পর্কে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, এমনকী আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটিকেও জানতে দেওয়া হয় না।যা বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।তদন্ত চলাকালে শিবিরটির প্রাক্তন বন্দিরা ইজরায়েলি সেনাদের হাতে বেধড়ক মারধর, বৈদ্যুতিক শক, অমানবিক আচরণ, ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়ার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে এই বন্দিদের আটজন ওই শিবিরে আটক ছিল। তাঁরা বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের ঘুষি ও লাথি মারা হয়েছে। পেটানো হয়েছে লাঠি-রাইফেলের বাঁট ও ধাতব দ্রব্য শনাক্ত করার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র দিয়ে।দু’জন বন্দি সেনাদের মারধরে পাঁজরের হাড় ভেঙে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাঁদের একজন দাবি করেছেন, তাঁকে হাঁটু দিয়ে বুকে আঘাত করা হয়েছে। অন্যজন বলেছেন, তাঁকে লাথি দেওয়া হয়েছে এবং রাইফেল দিয়ে মারা হয়েছে। সাতজন বন্দি বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁদের শুধু ডায়াপার পরে থাকতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার দাবি করেছেন তিনজন বন্দি।দ্য টাইমসের এ তদন্তে যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের চিত্রও উঠে এসেছে। এমন নির্যাতনের শিকার হওয়া বন্দিদের একজন ৩৯ বছর বয়সী জ্যেষ্ঠ নার্স মোহাম্মদ আল-হামলাবি। নিজের দুঃসহ স্মৃতির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, একজন নারী সেনা কর্মকর্তা দুই সেনাসদস্যকে নির্দেশ দেন তাঁকে ওপরে তুলে ধরতে। এরপর মেঝেতে লাগানো একটি ধাতবখণ্ডের ওপর তাকে রেখে চাপ দিলে সেটি পায়ুপথে ঢুকে যায়। এতে রক্তপাত ও অসহনীয় যন্ত্রণা হয় তাঁর।এদিকে প্যালেস্টাইন বিষয়ক রাষ্ট্রসঙ্ঘের মূল সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর ফাঁস হওয়া এক খসড়া প্রতিবেদনেও প্যালেস্টাইনি বন্দিদের নির্যাতনের একই রকম বর্ণনা পাওয়া গেছে।ইজরায়েলের বন্দিশিবিরে অমানবিক অবস্থায় থাকার বর্ণনাও দিয়েছেন প্যালেস্টাইনিরা। এর মধ্যে ছিল, চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে, অন্তর্বাস ছাড়া সব পোশাক খুলে রাখা ইত্যাদি। এর আগে সামরিক ট্রাকে গাদাগাদি করে তুলে এসদে তেইমান শিবিরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। পরে সেখানে তাঁদের বিশেষ ধরনের হ্যাঙ্গারে রাখা হয়। হাতকড়া পরা অবস্থায় মাদুরে চুপ করে বসে থাকতে বাধ্য করা হয় দিনে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত। শ্রান্ত-ক্লান্ত বন্দিরা ঘুমের ঘরে ঢলে পড়লে কর্মকর্তারা তাঁদের ডেকে নিতেন ও শাস্তিস্বরূপ পেটাতেন।আলাদাভাবে শুধু জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়াই ছিল এক দুঃস্বপ্নের অগ্নিপরীক্ষা। তদন্তে জানা যায়, বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে এক বিশেষ কক্ষে নিয়ে যাওয়া হতো; যেটিকে তাঁরা বলতেন ‘ডিসকো রুম’। সেখানে তাঁরা যাতে ঘুমিয়ে না পড়েন, সে জন্য অতি উচ্চশব্দে বাজানো হতো গান। এ ছিল নতুন ধরনের নির্যাতন। এমন এক ঘটনায় এক বন্দির কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ে।ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী এসদে তেইমান বন্দিশিবিরে আটক প্যালেস্টাইনিদের ‘পদ্ধতিগত উপায়ে নির্যাতনের’ এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হয়ে থাকে।
  • Link to this news (আজকাল)