কুড়মিদেরও কি বামেদের মত দুরবস্থা! সভা-মিছিলে ভিড়। অথচ ভোটে নেই তার প্রতিফলন। নিজেদের শক্তি পরীক্ষায় এ বার ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে পৃথক ভাবে দু’জন প্রার্থী দিয়েছিল দু’টি কুড়মি সংগঠন। সিপিএম প্রার্থীর মতো কুড়মি সংগঠনের দুই প্রার্থীরও জামানত জব্দ হয়েছে। এমন আবহে কী ভাবে কুড়মি জনমত সংগঠিত করা যাবে সেই পর্যালোচনা শুরু হয়েছে দু’টি কুড়মি সামাজিক সংগঠনের অন্দরে।
জাতিসত্তার দাবিতে ক্রমেই সুর চড়িয়েছে কুড়মি সামাজিক সংগঠনগুলি। কখনও একক ভাবে কখনও যৌথভাবে কুড়মি সামাজিক সংগঠনগুলি রেল ও জাতীয় সড়ক লাগাতার অবরোধ করে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের উপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। ভোটের আগেই অজিতপ্রসাদ মাহাতোর নেতৃত্বাধীন আদিবাসী কুড়মি সমাজ ২০ সেপ্টেম্বর খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলি ও পুরুলিয়ার কুস্তাউরে ‘রেল টেকা’র (রেল অবরোধ) ঘোষণা করেছিল। সূত্রের খবর, ফল দেখে আদিবাসী কুড়মি সমাজের একাংশ ‘রেল টেকা’র পরিবর্তে বিকল্প আন্দোলন কর্মসূচির পক্ষে সওয়াল করছেন। ঝাড়গ্রাম জেলার মোট জনসংখ্যার ২৩.২৭% কুড়মি। কুড়মিদের সামাজিক সংগঠনগুলির কর্মসূচিতে প্রচুর জনসমাগম হয়। তাতেই উৎসাহিত হয়ে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত। তবে লোকসভার ফলাফল দেখে কুড়মি সংগঠনগুলির পর্যবেক্ষণ, সামাজিক আন্দোলন আর রাজনৈতিক আন্দোলন এক নয়। অবস্থা অনেকটা যেন বামেদের মতো। কর্মসূচিতে লোক হচ্ছে। তবে ভোট আসছে না।
জাতিসত্তার দাবিতে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুর আসনে তিনজন কুড়মি নেতা নির্দলে লড়েছিলেন। তাঁদের তিনজনেরই জামানত জব্দ হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত বছর মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িতে হামলার অভিযোগে কুড়মি সামাজিক সংগঠনের ১৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ কুড়মিরাও ‘আমাদের ভোট আমাদের থাক’ স্লোগান তুলে পঞ্চায়েত ভোটে একাধিক আসনে নির্দলে লড়ছিলেন। ঝাড়গ্রাম জেলার সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়েছেন নির্দল কুড়মিরা। ভোট ঘোষণার আগে নবান্নে বিভিন্ন জনজাতি ও কুড়মি সংগঠনগুলির নেতৃত্বদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর অবশ্য কুড়মিরাও ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঝাড়গ্রামে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে আদিবাসী কুড়মি সমাজ ও আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের মধ্যে ঐক্যমত না হওয়ায় নেগাচারীদের সমর্থনে নির্দলে লড়েন জনজাতি বেদিয়া সম্প্রদায়ের বরুণ মাহাতো। ঝাড়খণ্ড পিপলস পার্টির প্রার্থী সূর্য সিং বেসরাকে সমর্থন করে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। বরুণের প্রাপ্তভোট ১২,০৮৭ টি। সূর্য সিং বেসরা পেয়েছেন ১৯,৪৯৪টি ভোট। বরুণ ও সূর্যসিং ভোট কেটে তৃণমূল কিংবা বিজেপি কারও সুবিধা কিংবা অসুবিধাও করতে পারেননি। তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেন ৭ লক্ষ ৪৩ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন। বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডুর প্রাপ্ত ভোট ৫,৬৯,৪৩০টি।
আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের মহামোড়ল অনুপ মাহাতো বলছেন, ‘‘সমাজের মানুষ হয়ত ভোটের রাজনীতি পছন্দ করছেন না। পর্যালোচনা করছি। তবে ভোটের রাজনীতি ছাড়ছি না।’’ আদিবাসী কুড়মি সমাজের মুখ্য উপদেষ্টা অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘বড় অংশ সরকারি দান খয়রাতির বিনিময়ে ভোট দিয়েছেন। পর্যালোচনা করে আগামী ইতিকর্তব্য স্থির করা হবে।’’