• ‘আমি দলের সৈনিক’, মন্ত্রিত্ব না পেয়ে ‘অভিমানী’ জগন্নাথ
    আনন্দবাজার | ১২ জুন ২০২৪
  • হাতে গোনা দু-একজন বাদে দলের প্রায় কেউই তাঁকে এবার রানাঘাট লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে চাননি! এমনকি তিনি প্রার্থী হওয়ার পরেও দলের একটা বড় অংশ লাগাতার প্রচার চালিয়েছে এই বলে যে, তিনি হেরে যাবেন। তারপরেও তিনি বিজয়ী হয়েছেন। শুধু তাই নয় বঙ্গ বিজেপির যে ক’জন এবার সাংসদ হয়েছেন তাঁদের মধ্যে জয়ের ব্যবধান সবথেকে বেশি তাঁরই। ১৮৬৮৯৯ ভোটে তিনি পরাজিত করেছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্ধীকে। ২০১৯ সালে তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল ২ লক্ষ ৩৩ হাজারের বেশি। পরপর দুবার বিপুল ভোটে জেতার পরও কেন তাঁর মন্ত্রিত্ব লাভ হল না, রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারকে নিয়ে চলছে জল্পনা।

    মন্ত্রী হতে পারেন বলে গতবারের মতো এবারও হাওয়ায় ভাসছিল তাঁর নাম। যদিও শেষপর্যন্ত শিকে ছেঁড়েনি। তবে পড়শি কেন্দ্র বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর অবশ্য গতবারের থেকে কম ব্যবধানে জিতলেও যথারীতি দ্বিতীয়বারের জন্য কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। সোমবার এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে নিজের অভিমান চেপে রাখতে পারেননি রানাঘাটের সাংসদ। নিজেকে দলের অনুগত সৈনিক বলার পাশাপাশি জগন্নাথ বলেন, “দল যখন সিদ্ধান্ত নেয় তার পিছনে নিশ্চয় কোনও ভাবনা থাকে। নিশ্চয় ভালর জন্যই সেই ভাবনা। সেই ভাবনা ভুল কী ঠিক, পরবর্তী কালে তা জানা যায়। তবে আপাতত যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা দলের ভালর জন্যই। আগেও বলেছি আমি দলের একজন সৈনিক মাত্র।”

    ২০০২-’০৩ সালে সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের পর নদিয়া আর কোনএ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পায়নি। তাই উপুর্যপরি দু’বার বড় ব্যবধানে জয়ের পর জেলার মানুষ আশা করেছিলেন জগন্নাথ মন্ত্রী হতে পারেন। জগন্নাথের কথায়, “দলের অনেরেই এবার বিরোধিতা করেছিল আমার টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে। দু-একজন বাদে সকলেই প্রচার করেছিল আমি হেরে যাব বলে। কিন্তু মানুষ আমার সঙ্গে ছিল। তাই জয়লাভ করেছি।” নিজের রাজনৈতিক জীবনপঞ্জী তুলে ধরে জগন্নাথ বলেন, “২০১৯ সালে রানাঘাট লোকসভা আসন বিজেপির সম্ভাব্য জেতার ২২ আসনের তালিকায় ছিল না। সেবার আমি বাংলায় তৃতীয় বৃহৎ ব্যবধানে জিতেছিলাম। আমার থেকে দু’জন বেশি ভোটে জিতেছিলেন পাহাড়ে। আবার শান্তিপুরে যে অজয় দে’কে বাম জমানায় কেউ হারাতে পারেনি। তাঁকে ২৫ বছর পর শান্তিপুর শহরে হারিয়েছি। সেবারও দলের থেকে প্রবল বিরোধিতা করা হয়েছিল আমাকে প্রার্থী করা নিয়ে।” তিনি মনে করিয়ে দেন, মালদহ থেকে মেদিনীপুর পর্যন্ত একমাত্র পঞ্চায়েত সমিতি বিজেপির দখল করেছে তাঁর এলাকাতেই। কিন্ত এত সবের পরেও কিছু পাওয়ার জন্য কোনওদিন বিদ্রোহ করেননি। উল্টে তিনি বিধায়ক পদ ছাড়ার পর তিন মাসের মাথায় উপনির্বাচনে যিনি বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি বিপুল ভোটে হারেন।

    গতবারে তাঁর নাম মন্ত্রিত্বের পর রাজ্য সভাপতি হিসাবেও উঠে এসেছিল। কিন্ত শেষপর্যন্ত সভাপতি হয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদার। এবার ফের নতুন সভাপতির খোঁজে বঙ্গ বিজেপি। কী মনে হচ্ছে? জগন্নাের দার্শনিক জবাব, “মন্ত্রী, সভাপতি কোনওটা না হলে আমি মরে যাব না। দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে আমি। অনেক পেয়েছি। পাওয়ার তো শেষ নেই।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)