পার্ক স্ট্রিটে অগ্নিকাণ্ড! মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ অ্যালেনপার্কের উল্টো দিকে একটি বহুতলে হঠাৎই আগুন লাগে। পার্ক স্ট্রিট এবং ক্যামাক স্ট্রিটের ঠিক সংযোগস্থলেই ওই বহুতল। নাম পার্ক সেন্টার । ঠিকানা— ১/১ ক্যামাক স্ট্রিট। আগুন লাগে পার্ক সেন্টারের উপরের তলে। সেখানে একটি নাইট ক্লাব তথা রেস্তরাঁ ছিল। রেস্তরাঁর ভিতরে নানা দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গোটা এলাকা ছেয়ে যায় কালো ধোঁয়ায়। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় কেউ আহত বা জখম হননি। ভিতরে যাঁরা আটকে ছিলেন, তাঁদের নিরাপদে বাইরে বার করে আনা গিয়েছে।
মঙ্গলবার সকালের ব্যস্ত সময়ে এই ঘটনা যখন ঘটে, তখনই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ৫টি ইঞ্জিন। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় পরে আরও ইঞ্জিন পাঠানো হয়। শেষে প্রায় দু’ ঘণ্টার চেষ্টায় ১৫টি দমকলের ইঞ্জিন দুপুর ১টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে পৌঁছন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুও। কথা বলেন আগুন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা পুলিশ এবং দমকলবাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে। কথা বলেন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গেও।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, রেস্তরাঁয় লাগা আগুন অস্থায়ী অ্য়াসবেসটসের ছাদ এবং নানা দাহ্য পদার্থের জন্যই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রেস্তরাঁর ভিতরে নানা দাহ্য পদার্থ ছাড়াও ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। তবে সিলিন্ডার ফাটার আগেই দমকলবাহিনী তৎপরতার সঙ্গে ওই সিলিন্ডার সরানোর ব্যবস্থা করে। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, তা না হলে আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারত এই আগুন। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, রেস্তরাঁর অস্থায়ী ছাদ ভেঙে নীচে পড়তে শুরু করে। দুর্ঘটনা এড়াতে এলাকার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ।
তবে পুলিশকে রেস্তরাঁর মালিক গৌরব ঝুনঝুনওয়ালা জানিয়েছেন, তাঁর রেস্তরাঁটি কয়েক মাস ধরে বন্ধই পড়ে ছিল। সেখানে কাজ চলছিল। তাই ক্ষয়ক্ষতি হলেও বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। এর জন্য দমকলবাহিনী, দমকলমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
এই পার্ক সেন্টারের নীচের তলেও একটি রেস্তরাঁ রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে সেই ক্যাফেতে বিশেষ প্রভাব পড়েনি। নীচের ওই রেস্তরাঁর মালিক জানিয়েছেন। দু’-তিন বছর আগেও একবার আগুন লেগেছিল ওই রেস্তরাঁয়। তবে তার পরও কেন যথাবিধি সতর্কতা নেওয়া হয়নি সে ব্যাপারে প্রশ্ন উঠছে।
দমকলমন্ত্রী সুজিত অবশ্য জানিয়েছেন, কেন আগুন লাগল, অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও আইন ভাঙা হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে। আপাত আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে এলাকা সুরক্ষিত করাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। একই সঙ্গে সুজিত জানিয়েছেন, দমকলবাহিনী ভাল কাজ করে আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে দেখে তিনি আশ্বস্ত। কেউ এই ঘটনায় আহত হননি বলেও নিশ্চিত করেছেন সুজিত।
মঙ্গলবার আগুন লাগার পরে রেস্তরাঁর ভিতরে আটকে ছিলেন তিন-চার জন। দমকল সূত্রের খবর, ওই তিন-চার জনকে দ্রুততার সঙ্গে বাইরে বার করে আনা হয়। তার পরে পুরোদমে শুরু হয় আগুন নেভানোর কাজ।
পার্ক সেন্টারের গায়ে-গায়েই রয়েছে অনেকগুলি বহুতল। এর মধ্যে পার্ক সেন্টারের পিছন দিকের বহুতলটিতে অফিস ছাড়াও রয়েছে ফ্ল্যাটবাড়ি। আগুনের শিখা প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল এই বাড়িগুলিকেও। কালো ধোঁয়ায় ভয় পেয়ে আবাসিকেরা কোনওমতে নেমে আসেন রাস্তায়। পুলিশও বিপজ্জনক জায়গায় থাকা ফ্ল্যাট বা অফিসগুলি ফাঁকা করে দেয়।