• প্রয়াত আন্দোলনকারীর স্মরণে একজোট সব চাকরিপ্রার্থী মঞ্চ
    আনন্দবাজার | ১২ জুন ২০২৪
  • কারও চোখে জল, কেউ কোনও কথা না বলে স্তব্ধ হয়ে বসে রয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে তীব্র গরমের মধ্যে ধর্মতলায় মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে একটি ত্রিপলের নীচে বসা সকলেই তখন কার্যত দরদর করে ঘামছেন। কিন্তু কারও কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। সকলের মনই ভারাক্রান্ত।

    মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে বসে নিয়োগের দাবিতে মাসের পর মাস ধর্না-অবস্থান করছেন টেট পাশ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী, উচ্চ-প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থী, ইন্টারভিউ-বঞ্চিত উচ্চ-প্রাথমিক পরীক্ষার্থী, এসএসসি গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি প্রার্থী এবং রাজ্য সরকারের গ্রুপ ডি-র চাকরিপ্রার্থীরা। অন্য দিনে সকলেই আলাদা আলাদা ভাবে বসেন। কিন্তু এ দিন সমস্ত চাকরিপ্রার্থীকে এক ত্রিপলের তলায় নিয়ে এল চাকরিপ্রার্থী ইমরান হোসেনের স্মরণসভা। ৫ মে তাঁর গ্রামের বাড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমুন্ডিতে ব্রেন স্ট্রোকে মারা যান ইমরান।

    নতুন এসএসসি পরীক্ষার দাবিতে ওয়েস্ট বেঙ্গল এসএসসি-এসএলএসটি গ্রুপ সি ও ডি একতা মঞ্চের অন্যতম নেতা ছিলেন ইমরান। তাঁর মা-বাবা জানান, কবে নতুন এসএসসি পরীক্ষা হবে, এই দুশ্চিন্তা ইমরানকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিতে না পারায় অকালেই ব্রেন স্ট্রোক হয়ে চলে যেতে হল ইমরানকে।

    এ দিন স্মরণসভায় বসে প্রাথমিক টেট পাশ চাকরিপ্রার্থী অরুণিমা পাল বলেন, ‘‘আমাদের মঞ্চ তো একটাই। প্রতারিতদের মঞ্চ, বঞ্চিতদের মঞ্চ, উপেক্ষিতদের মঞ্চ। যাদের স্কুলে গিয়ে পড়ানোর কথা ছিল, তারা দুর্নীতির শিকার হয়ে বছরের পর বছর বসে রয়েছে। কেউ ইমরান হয়ে যাচ্ছে, কেউ জীবন্ত লাশ হয়ে যাচ্ছে।’’

    ইমরানের স্মৃতি আঁকড়েই ফের জোটবদ্ধ হচ্ছে আন্দোলন। আর এক চাকরিপ্রার্থী তারিকুল আনোয়ার বলেন , ‘‘এখানে বসেই কয়েক মাস আগে ইমরান আন্দোলন করেছে। ওর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হল না। অঙ্কে এম এসসি-র সঙ্গে বিএড প্রশিক্ষিত ইমরান পরীক্ষায় বসার সুযোগও পেল না। ২০১৬ সালের পরে আর এসএসসি হয়নি। অথচ নতুন এসএসসি পরীক্ষায় আইনি বাধা নেই।’’ চাকরিপ্রার্থী আনন্দ মল্লিক বলেন, ‘‘ইমরান বলত, এই আন্দোলন সবাইকে নিয়ে করতে হবে। তাই হয়তো ও আজ না থেকেও সব মঞ্চকে মিলিয়ে দিল।’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)