রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ভোটে বিপর্যয়ের পর প্রবল ডামাডোল শুরু বঙ্গ বিজেপিতে। চব্বিশের লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপির বিপর্যয়ের জন্য ঘরে—বাইরে প্রবল আক্রমণের মুখে পড়ে এবার মুখ খুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিছুটা অভিমানের সুরেই দলের মধ্যে তাঁর সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বললেন, ?ভালো হলে নিজেদের ক্রেডিট দেন। খারাপ হলে আমার ঘাড়ে চাপান। আমি কখনই দলের অভ্যন্তরের বিষয় বাইরে বলি না।? তাঁর নিশানায় দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদাররাই বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি ফল বিপর্যয়ের পর দলের মধ্যে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে সংগঠনের কোনও বিষয়ে তিনি মাথা গলান না বলে কার্যত দায় ঝেড়ে ফেলের চেষ্টাও করলেন বিরোধী দলনেতা। বুধবার সল্টলেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে দিল্লি এবং রাজ্যে দলের চাপের মুখে পড়ে শুভেন্দুর দাবি, ‘‘সংগঠনের বিষয় নিয়ে আমি কোনও প্রতিনিধিত্ব করি না। আমার কাজ প্রচার করা। সাংগঠনিক ব্যাপারে আমি হস্তক্ষেপ করি না। ভবিষ্যতে করার ইচ্ছেও নেই।’’
লোকসভা ফলের পরই বিজেপির অভ্যন্তর থেকে একের পর এক শুভেন্দুকে নিশানা করে তোপ দাগা চলছেই। জেতা আসন থেকে সরিয়ে অন্যত্র সরানোয় ঢাক গুড়গুড় না করেই পরপর স্পষ্ট আক্রমণ হানেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। লকেট চট্টোপাধ্যায়েরও গলায় একই সুর ছিল। সৌমিত্র খাঁও তোপ দাগেন শুভেন্দুকে। বাংলায় বিজেপির এক ধাক্কায় ছয়টি আসন কমেছে। বাংলায় প্রার্থী তালিকায় শুভেন্দুর পছন্দকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন মোদি—অমিত শাহ সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের থেকেও শুভেন্দুর উপর বেশি ভরসা করেছিল দিল্লি। তাছাড়া, বঙ্গ বিজেপিতে তিনি নিজের মতো আরেকটি সংগঠন চালান বলেও বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে গেরুয়া শিবিরের একাংশের।
শুভেন্দুর পছন্দের প্রায় সকল প্রার্থীকেই হারতে হয়েছে। আর বিজেপির বড় ‘লস’ মেদিনীপুর ও বর্ধমান—দুর্গাপুর আসনটি হাতছাড়া হওয়া। দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে শেষ মুহূর্তে মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে বর্ধমান—দুর্গাপুর আসনে পাঠানো এবং বর্ধমান—দুর্গাপুরের সাংসদ এস এস আলুওয়ালিয়াকে আসানসোলে প্রার্থী করার পিছনে শুভেন্দুরই হাত ছিল বলে দলের অন্দরের খবর। এই দু’টি আসনই হারারর জন্য সরাসরি শুভেন্দুকেই দায়ী করছে দলের বড় অংশ। হারার পর দিলীপ ঘোষও নাম না করে প্রকাশ্যে শুভেন্দুকে নিশানা করেছেন। এদিন তা নিয়েই শুভেন্দু কার্যত অভিমানের সুরে বলেন, ?দলের ভিতরের কোনও কথা প্রকাশ্যে আমি বলি না। আমি খুব ডিসিপ্লিন। তাতে সবাই আমায় পুরস্কার দেয় না। কেউ কেউ তিরস্কারও দিতে পারে। অনেকে অনেক কিছু পোস্টও করতে পারে। তীর্যক মন্তব্য করতে পারে।? তাঁর এই মন্তব্য দিলীপ-সহ পুরনো বিজেপি নেতাকর্মীদেরই উদ্দেশে বলে মনে করা হচ্ছে।
দলের ভুল প্রার্থী বাছাই নিয়ে তিনি সমালোচিত। আর সেকারণেই আসন্ন চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কারা প্রার্থী হবেন সে বিষয় নিয়ে সতর্ক শুভেন্দুর দাবি, ‘‘প্রার্থী নির্বাচন, প্রচার কৌশল সবটাই সংগঠন তৈরি করে। এসব বিষয়ে জেলা সভাপতিরা বলে পারবেন।’’রাজ্য বিজেপিতে তাঁর বিরোধী শিবির এবং শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশকে বার্তা দিয়ে শুভেন্দুর দাবি, তিনি নিজের গাড়ি চড়েন, তেল খরচও নিজে করেন। মনে করা হচ্ছে, ভোটে রাজ্য বিজেপির অর্থ খরচের হিসেব নিয়েও যখন নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তখন সেই দায় রাজ্য নেতাদের দিকেই ঠেলে দিতে চেয়ে বিরোধী দলনেতার দাবি, তিনি পার্টির পয়সা নেন না।