রাজ্যে ক্রমবর্ধমান তাপপ্রবাহকে মাথায় রেখে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার উপদেশ দিল স্কুল শিক্ষা দফতর। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে স্কুলগুলি চালানো যেতে পারে, স্থানীয় আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে সেই সিদ্ধান্ত স্কুলগুলির উপরই ছেড়ে দেওয়ার উপদেশ দিয়েছে দফতর। ইতিমধ্যেই জেলা স্কুল পরিদর্শকের মারফত বিজ্ঞপ্তি পৌঁছে গিয়েছে জেলার স্কুলগুলিতেও। নানা বাধা থাকলেও অনেক স্কুলই সকালে পড়াশোনা চালানো নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে।
এই নির্দেশিকা হাতে পাওয়ার পর সকালের দিকে পঠনপাঠন চালানো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে জেলার স্কুলে। তবে সকালে স্কুল খোলার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতারও মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাঁদের। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা।
এ দিন সিউড়ির একাধিক স্কুল এই নির্দেশিকার পরিপ্রেক্ষিতে সকালে স্কুল খোলার ভাবনা শুরু করেছে। তবে সেক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতার কথাও সামনে আসছে। বিশেষত, বীরভূম জেলা স্কুল, চন্দ্রগতি হাইস্কুল, আরটি গার্লস স্কুল এবং বেণীমাধব ইন্সটিটিউটের ভবনেই যেহেতু সকালে প্রাথমিক স্কুলের পড়াশোনা চলে, তাই ওই স্কুলগুলিতে কী ভাবে সকালে স্কুল হবে তা নিয়ে চিন্তায় শিক্ষকেরা।
অনেক স্কুলে পড়ুয়া বা শিক্ষক-শিক্ষিকারা কিছুটা দূর থেকে আসেন, তাঁদের পক্ষেও সকালে স্কুলে আসা বেশ কঠিন। তবে, সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে সকালেই স্কুল করার দিকেই ঝুঁকছে প্রায় সকলেই। কারণ তীব্র গরমের জন্য দুপুরে ক্লাস করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি অভিজিৎ নন্দন বলছেন, ‘‘তাপপ্রবাহের জন্য অসুবিধে হচ্ছিল পড়ুয়াদের। সকালে যাতে স্কুল হয়, সেজন্য আমরা সর্বস্তরে যথেষ্ট তদ্বির করেছি।’’
সিউড়ি পাবলিক অ্যান্ড চন্দ্রগতি মুস্তাফি মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুমন্ত রাহা বলেন, “রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। এই গরমে দুপুরে স্কুল চালানো ছাত্রদের জন্য মারাত্মক হয়ে উঠছিল। উপস্থিতি কার্যত তলানিতে ঠেকেছিল। এই সিদ্ধান্তে খুবই সুবিধা হবে। আমাদের স্কুলের ভবনের ভিতরে যে প্রাথমিক স্কুলটি চলে, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সকালেই স্কুল চালাব।”
সকালে স্কুলের ক্ষেত্রে প্রতিটি ক্লাসের সময় ৪০ মিনিট থেকে কমিয়ে ৩৫ মিনিট করা এবং মাঝে জলপানের জন্য ১০ মিনিট বিরতি দেওয়ার ভাবনাও রয়েছে স্কুলের। পঠন-পাঠনের শেষে মিড-ডে মিলের খাবার খেয়ে পড়ুয়ারা বাড়ি ফিরবে, এমনই পরিকল্পনা নিয়েছে স্কুল। সুমন্ত রাহা বলেন, “এতে করে হয়তো পুরো পঠন-পাঠন হবে না। কিন্তু পড়াশোনা কিছু না হওয়ার থেকে কিছুটা তো হওয়া ভাল।”
সিউড়ির আরটি গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ক্রিস্টিনা মার্ডি বলেন, “আমাদের শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা এতটা বেশি নয় যে প্রাথমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের পঠন-পাঠন একসঙ্গে করা যাবে। তবে ছাত্রীদের কথা ভেবে সকালেই স্কুল করার কথা ভাবছি। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা এবং স্কুলের পরিচালন সমিতির সঙ্গে কথা বলে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।” সকালে স্কুল করার ভাবনা রয়েছে সিউড়ি মিউনিসিপ্যাল গার্লস হাইস্কুলেরও। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা অনামিকা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনা করে সকালে স্কুল খোলারই চেষ্টা করব।”