• অরুণাচলে পেমা খান্ডুর ৩.০ সরকার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৪ জুন ২০২৪
  • দিল্লিতে তৃতীয়বার মোদি সরকারের মতোই অরুণাচলেও বৃহস্পতিবার টানা তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন পেমা খান্ডু৷ তাঁর সঙ্গেই আবার উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছে চওনা মেইন৷ বিদায়ী মন্ত্রিসভাতেও তিনি পেমার ডেপুটি ছিলেন৷ পেমা এবং মেইনের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল কেটি পরনায়েকের কাছে মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন বিজেপির আরও ১০ জন বিধায়ক৷ শপথ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ দলের সর্বভারতীয় নেতারা৷ তাঁদের শপথ বাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল কে টি পটনায়েক৷ উপস্থিত ছিলেন জেপি নাড্ডা, অমিত শাহ, কিরেন রিজিজু, হিমন্ত বিশ্বশর্মার মতো সিনিয়র বিজেপি নেতারা৷ এই পেমা খাণ্ডু ২০১৬ সালে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হন৷

    অরুণাচলের তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রী বছর ৪৪ এর পেমা খাণ্ডু একটা সময় তিনি ছিলেন কংগ্রেসে ৷ এর পর বিজেপিতে যোগ দিয়েও দুবার মুখ্যমন্ত্রী হলেন৷ ১৯ এপ্রিল প্রথম দফা লোকসভা নির্বাচন ছিল৷ সে দিনই উত্তর-পূর্ব ভারতের দুই রাজ্যে অরুণাচল ও সিকিমে বিধানসভায় ভোটগ্রহণ হয়৷ অরুণাচলে মোট ৬০টি আসন৷ ম্যাজিক ফিগার ৩১৷ অর্থাৎ সরকার গঠন করতে হলে অন্তত ৩১ আসনে জয় প্রয়োজনে৷ এর মধ্যে ১০টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় বিজেপি৷ বাকি ৫০ আসনে ভোট হয়৷ সব মিলিয়ে ৬০ আসনের মধ্যে ৪৫টি যায় বিজেপির দখলে৷ মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন খাণ্ডু৷

    বৃহস্পতিবার তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন পেমা৷ তাঁর সঙ্গে উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন চৌমা মেইন৷ তিনিও দ্বিতীয়বার উত্তর-পূর্বের রাজ্যটির উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন তিনি৷ এদিন শপথ নিয়েছেন রাজ্যের ১১ জন মন্ত্রীও৷ একটা সময় ছিলেন কংগ্রেসে৷ তাঁর নেতৃত্বেই অরুণাচল কংগ্রেসের গোটা বিধায়ক দল কার্যত একসঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেন৷ দু-একজন বিধায়ক ছাড়া হাত শিবির কার্যত শূন্য হয়ে যায়৷ তারপর থেকেই অরুণাচলের রাজনীতিতে দাপট দেখাচ্ছে বিজেপি৷

    প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের সঙ্গেই এ বার ৬০ সদস্যের অরুণাচল বিধানসভা ভোট হয়েছিল৷ নির্বাচনের আগেই পেমা-সহ বিধানসভার ১০ জন বিজেপি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছিলেন৷ যে ৫০টি আসনে ভোট হয়েছিল তার মধ্যে ৩৬টিতেই জিতে ৪৬-এ পৌঁছে গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী পেমার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন বিজেপি৷ পাঁচটিতে মেঘালয়ের শাসকদল এনপিপি৷ বাকি তিনটিতে অজিত পওয়ারের এনসিপি, দু’টিতে পিপল্স পার্টি অফ অরুণাচল (পিপিএ), একটিতে কংগ্রেস এবং তিনটি আসনে নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন৷

    গত দেড় দশকে ইটানগরে বহু বার রাজনৈতিক টানাপডে়ন হয়েছে৷ ২০১১ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পেমার পিতা তথা তৎকালীন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী দোরজি খান্ডুর মৃতু্য হয়৷ এর পরে অশান্তি শুরু হয় কংগ্রেসের অন্দরে৷ প্রথমে জারবম গ্যামলিন মুখ্যমন্ত্রী হন৷ কংগ্রেসে শুরু হয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব৷ কিন্ত্ত কংগ্রেস হাইকমান্ডের সমর্থনে ক্ষমতা দখল করেন নাবাম টুকি৷ ২০১৪ সালের ভোটে কংগ্রেস ৪২ আসনে জিতলে টুকি ফের মুখ্যমন্ত্রী হন৷কিন্ত্ত কালিখো পুলের নেতৃত্বে পেমা-সহ বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়কেরা তাঁকে সরিয়ে বিজেপির সমর্থনে সরকার গডে়ন৷ মামলা আদালতে গড়ায়৷ রাষ্ট্রপতি শাসনে টুকি ক্ষমতা ফিরে পেলেও কংগ্রেস নেতৃত্ব পেমার এবং তাঁর অনুগামীদের দাবি মেনে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করেন৷ ২০১৬ সালে পেমার নেতৃত্বে অধিকাংশ বিধায়ক দলবদল করে পিপিএতে যোগ দেন৷ আঞ্চলিক দল পিপিএ সরকার গডে়৷ পরে তাঁরা ফের দল বদলে বিজেপিতে যোগ দেন৷এর পর ২০১৯-এর বিধানসভা ভোটে জিতে বিজেপি অরুণাচলে ক্ষমতা দখল করে৷ এ বারও বজায় থেকেছে সেই জয়ের ধারা৷ গত কয়েক দশক ধরেই দেখা গিয়েছে, দিল্লিতে যার সরকার, অরুণাচল সেই দলের দিকেই ঝোঁকে৷
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)