দুবাইয়ের ধাঁচে এবার পুজোর আগে কলকাতায় শপিং ফেস্টিভ্যাল, উদ্যোগ মুখ্যমন্ত্রীর
প্রতিদিন | ১৪ জুন ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার: পুজোর আগে কলকাতায় আন্তর্জাতিক ‘শপিং ফেস্টিভ্যালে’র আয়োজন হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগে। দুবাইয়ে যেভাবে এই ফেস্টিভ্যাল হয় ঠিক সেই ধাঁচেই হবে। ২০-২৬ সেপ্টেম্বর, সাতদিন ধরে কলকাতা বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে এই ফেস্টিভ্যালের আসর বসবে। উৎসবের শহরের রোশনাই বাড়িয়ে দেবে এই বাণিজ্যিক উৎসব। দেশ-বিদেশের বহু নামী-দামী সংস্থা উৎসবে অংশ নেবে। পরে এই বাণিজ্য উৎসব ছড়িয়ে দেওয়া হবে সমস্ত জেলায়। মূলত ব্যবসায় রাজ্যজুড়ে জোয়ার আনতে এই উদ্যোগ নিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা শিল্প বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী শপিং ফেস্টিভ্যালের বিষয়টি প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে (Amit Mitra) দেখতে বলেন। সে বিষয়ে দুবাইয়ের একটি সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা এগিয়েছে বলে সূত্রের খবর। সেখানকার এক প্রতিনিধিদল শীঘ্রই এ রাজ্যে আসবে। তবে এ বছর নভেম্বরে প্রস্তাবিত বিজিবিএস (BGBS) হচ্ছে না। সামনের বছর হবে। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ম্যারাথন লোকসভা ভোটের কারণে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই কারণে চলতি বছরে অষ্টম বিজিবিএস করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে শিল্পের উন্নতিতে কোনও কিছু অন্তরায় হবে না।
মমতার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্যের বণিকমহল। রাজ্যের বিশিষ্ট শিল্পপতিরা এক সুরে বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর এই নতুন নতুন ভাবনার জন্যই বাংলায় শিল্পায়নের পরিবেশ সুন্দর হয়েছে। এখানে ব্যবসার বড় সুযোগ দেখা দিয়েছে। এই ধরনের ফেস্টিভ্যাল হলে কলকাতা সম্পর্কে বিদেশি উদ্যোগপতিদের আগ্রহ অনেকটাই বাড়বে। তাছাড়া সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকায় এই ফেস্টিভ্যালে বড় অঙ্কের ব্যবসা হবে বলেও মনে করা হচ্ছে। যা পুজোর আগে আখেরে রাজ্যের আর্থিক মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করবে।
জানা গিয়েছে, শপিং ফেস্টিভ্যালে ‘শোকেস ওয়েস্ট বেঙ্গল’ শীর্ষক বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও থাকছে, যেখানে রাজ্যের হস্তশিল্প, টেক্সটাইল, খাবার-সহ রাজ্যের বিভিন্ন আকর্ষণকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হবে। তুলে ধরা হবে জিআই ট্যাগ পাওয়া দ্রব্যসামগ্রী, শিল্পের পরিবেশের সমর্থনে তথ্য। শিল্পের জন্য রাজ্য সরকার কী কী সুবিধা দিচ্ছে তাও তুলে ধরা হবে। এদিন অর্থনৈতিক করিডর নিয়েও স্টেটাস রিপোর্ট চান মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে চার থেকে পাঁচটি অর্থনৈতিক করিডর তৈরি হবে। প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, কোনও ফাইল আটকে রাখা যাবে না। দ্রুত হস্তান্তর করতে হবে, যাতে শিল্পপতিদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা না হয়। শিল্পস্থাপনে জমি যে কোনও সমস্যা হবে না, সেই ব্যাপারেও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন মমতা। জানিয়েছেন, রাজ্যের হাতে ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তৈরি আছে। শিল্প স্থাপনের জন্য যে কেউ জমি চাইলেই পাবেন। রাজ্যে তৈরি হওয়া শিল্পজাত পণ্য রপ্তানির জন্য সমস্ত রকমের পরিকাঠামোগত এবং পারিপার্শ্বিক সাহায্য দেওয়া হবে।
ভোটের পর কৃষি থেকে শিল্প সব ক্ষেত্রেই নব উদ্যোগে কাজ শুরু করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক বৈঠকের পর শিল্প বৈঠক। রাজ্যের প্রায় সমস্ত শিল্পোদ্যোগী, বণিকসভার প্রতিনিধিরা তো ছিলেনই, ছিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু-সহ একাধিক দফতরের মন্ত্রী ও সচিবরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এদিন কর্মসংস্থানমুখী শিল্পের উপর বেশি জোর দিতে বলেন। ভারী শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেন। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের মতো শ্রমনিবিড় শিল্পকে যে তিনি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, তাও এদিন মনে করিয়ে দেন। রাজ্যের মূল লক্ষ্য, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে আরও চাঙ্গা করা। আর সেদিকে নজর রেখেই এখানকার শিল্পীদের তৈরি জিনিস বিদেশে বাজারজাত করায় নজর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি গত বছরের বিজিবিএসে যে সমস্ত সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, সেগুলির অগ্রগতি নিয়েও অমিত মিত্রকে রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে।
এই বছরের গোড়ায় প্রত্যেক জেলায় স্থানীয় শিল্পীদের হাতে তৈরি জিনিস দিয়ে মেলারও আয়োজন করা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। এবার বিদেশে এখানকার স্থানীয় শিল্পীদের হাতে তৈরি দ্রব্যের বাজার তৈরি করতে চাইছে সরকার। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী এর আগে একাধিকবার জানিয়েছিলেন, এখানকার স্থানীয় শিল্পীরা অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস বানান। সেগুলি বিক্রির জন্য একটা ভালো বাজারের প্রয়োজন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীও যে সমস্ত পণ্য তৈরি করে, সেগুলোকেও ব্র্যান্ডিং করে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অনলাইনেও কীভাবে তা বিক্রি করা যায়, তাও দেখা হচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন শিল্পীদের রোজগার বাড়বে, তেমনই বিশ্বজুড়ে হবে বাংলার ব্র্যান্ডিং। জমি নিয়ে যেসব শিল্পসংস্থা ফেলে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে রাজ্য কড়া হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল ভারী শিল্পের অনুকূল হলেও অনেকে জমি নিয়ে সেখানে লগ্নি করছেন না।