উৎপাদনহীন রাজ্য সরকারের সংস্থা ‘দুর্গাপুর কেমিক্যালস লিমিটেডে’ (ডিসিএল) অবসরের পরেও ‘প্রভিডেন্ট ফান্ডের’ (পিএফ) টাকা মিলছে না, এই অভিযোগে বৃহস্পতিবার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা দুর্গাপুরের আঞ্চলিক পিএফ কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখান। পিএফ কার্যালয়ের তরফে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়।
দুর্গাপুরের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে ডিসিএল কারখানা। ২০১৬ সালে ডিসিএল বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় রাজ্য ক্যাবিনেটে। ২০১৯-এর ৩০ ডিসেম্বর দূষণ ছড়ানো ও নিরাপত্তাজনিত কারণে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরামর্শে রাজ্যের শিল্প পুনর্গঠন দফতর কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। তার পর থেকে কারখানা বন্ধ পড়ে রয়েছে। পুরনো কর্মীরা অবসর নিচ্ছেন। নতুন নিয়োগ বন্ধ। অভিযোগ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা পিএফের টাকা পাচ্ছেন না। ডিসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তাঁদের পিএফ কার্যালয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে গেলে তাঁদের কারখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে এ দিন তাঁরা সিটি সেন্টারে আঞ্চলিক পিএফ কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখান। অবিলম্বে প্রাপ্য মেটানোর দাবিতে আধিকারিকদের ঘিরে ক্ষোভ জানান তাঁরা। শেষ পর্যন্ত পিএফ কার্যালয়ের তরফে জানানো হয়, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে।
বিক্ষোভকারীরা জানান, অবসরের পরে সংসার চালাতে নাজেহাল অবস্থা। টাকার অভাবে কারও মেয়ের বিয়ে আটকে রয়েছে বলে দাবি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্ষোভকারী জানান, তিনি মাস আটেক আগে অবসর নিয়েছেন। মাসে মাত্র ২,৯৫০ টাকার পেনশনই সম্বল। এই পরিস্থিতিতে পিএফের টাকা আটকে থাকায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। বিক্ষোভকারী স্নিগ্ধা তন্তুবায় বলেন, “আগে অবসরের দিনেই কার্যত পিএফের চেক দিয়ে দেওয়া হত। সংশ্লিষ্ট বিভাগেরই আমি কর্মী ছিলাম। আমাদের সময়ে বলা হয়েছিল, এক-দেড় মাসের মধ্যে পেয়ে যাব। কিন্তু কোথায়।” অপূর্বকুমার রায় বলেন, “রাজ্য সরকারের কারখানায় চাকরি করে পিএফের টাকা মিলছে না। কী আর বলব।“ বিক্ষোভে শামিল কারখানার কর্মী সুভাষ রায় বলেন, “আমি এখনও চাকরি করছি। আমার পিএফ অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা পড়েছে, আমি জানতে পারছি না।”
বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “দৈন্যতার চূড়ান্ত। রাজ্য সরকার একটি চালু কারখানা পাঁচ বছর আগে বন্ধ করে দিয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা তাঁদের প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না।” তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এক জন কর্মীরও চাকরি যায়নি। তাই পিএফের টাকাও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সময়ে পাওয়ার কথা। পিএফ দফতরকে দ্রুত সমস্যা মেটাতে হবে।”
আঞ্চলিক পিএফ কমিশনার সুধীর রঞ্জন বলেন, “প্রযুক্তিগত কারণে সমস্যা হচ্ছে।” দ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।