• বড় জয়েও কাঁটা কোন্দল
    আনন্দবাজার | ১৪ জুন ২০২৪
  • পাঁচ বছরের ব্যবধানে সাঁইথিয়া বিধানসভা এলাকায় শাসকদলের ‘লিড’ বেড়েছে প্রায় ৩৬ হাজার!

    বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শতাব্দী রায় জয়ী হয়েছেন। প্রতিটি বিধানসভা এলাকা থেকেই তিনি ‘লিড’ পেয়েছেন। জয়ের ব্যবধানও অনেকটা বাড়িয়ে নিয়েছেন। উল্লেখযোগ্য ভাবে ভাল ফল হয়েছে সাঁইথিয়ায়। যে বিধানসভা এলাকায় ২০১৯ সালে ২১৫ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন শতাব্দী, সেখান থেকে ৩৫ হাজার ৬৩৭ ভোটের ব্যবধানে এ বার তিনি এগিয়ে।

    সাঁইথিয়ার বিধায়ক নীলাবতি সাহার দাবি, ‘‘প্রত্যেক তৃণমূল কর্মী ঐক্যবদ্ধ ভাবে খেটেছেন। সঙ্গে রয়েছে রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ নানা সামাজিক প্রকল্প এবং এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ। এই সব কারণেই এত ভাল ফল হয়েছে।’’

    জানা গিয়েছে, এই বিধানসভা এলাকার অন্তর্ভুক্ত সিউড়ি ২ ব্লকে শতাব্দী এ বার ‘লিড’ পেয়েছেন ২৬ হাজার ৬৪৪ ভোটের। ওই ব্লকের তৃণমূল সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘মজবুত সংগঠন, সারা বছর ধরে নানা কর্মসূচি পালন করা এবং রাজ্য সরকারের প্রকল্পের জন্য মানুষ ঢেলে ভোট দিয়েছেন।’’ যদিও বিজেপির দাবি, কার্যত বিরোধী-শূন্য ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ব্লক বলেই এমন ব্যবধান হয়েছে। তবে, মাত্র ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত বিশিষ্ট ছোট্ট ব্লকে এই বিপুল পরিমাণ ‘লিড’ই সাঁইথিয়া বিধানসভায় শতাব্দীকে ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধান দিয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে সাঁইথিয়া শহর এলাকা। এ বার সিউড়ি ও রামপুরহাট পুরসভা এলাকায় বিজেপি-র চেয়ে শাসকদল অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও উজ্জ্বল সাঁইথিয়া।

    গত লোকসভা নির্বাচনে সাঁইথিয়া পুর-এলাকায় প্রায় ৯ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। এমনকি, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও এই পুরসভা এলাকায় পিছিয়ে ছিল তারা। সেখানেই এ বার হাজার দুয়েক ভোটের লিড পেয়েছে শাসকদল। শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস সাহা বলেন, ‘‘৯ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকাকে দু’হাজার ভোটে এগিয়ে রাখতে হলে ১১ হাজার ভোট বেশি পেতে হয়েছে। গত ছয় মাস থেকে টানা খেটে সেই পরিবেশ তৈরি করা গিয়েছিল।’’ তাঁর আরও দাবি, শেষ বেলায় মুখ্যমন্ত্রীর সাঁইথিয়ায় নির্বাচনী জনসভা করাও ইতিবাচক ফল করায় সহায়তা করেছে। কারণ কোনও মুখ্যমন্ত্রী এই প্রথম সাঁইথিয়া এলেন।

    তবে, শাসকদলের অস্বস্তি জিইয়ে রয়েছে সাঁইথিয়া ও মহম্মদবাজার ব্লকের অংশে। তৃণমূল সূত্রে খবর, সাঁইথিয়া বিধানসভা এলাকার মধ্যে রয়েছে পুরো সিউড়ি ২ ব্লক, সাঁইথিয়া ব্লকের ছ’টি পঞ্চায়েত, সাঁইথিয়া পুরসভা এলাকা এবং মহম্মদবাজার ব্লকের ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। মহম্মদবাজার ও সাঁইথিয়া ব্লকে ভাল ফল হয়নি বলেই তৃণমূল মনে করছে। সাঁইথিয়ার ৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৩টিতে এবং মহম্মদবাজারের ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের চারটিতে (আঙ্গারগড়িয়া, ভূতুড়া, মহম্মদবাজার ও ডেউচা) এগিয়ে বিজেপি।

    সাঁইথিয়ার যে অংশে আশানুরূপ ফল হয়নি, তার নেপথ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলেই নেতৃত্ব মনে করছেন। দল সূত্রের খবর, সাঁইথিয়া ব্লকের সভাপতি সাবের আলি খানের সঙ্গে নানা বিষয়ে তৃণমূল নেতা তুষার মণ্ডলের গোষ্ঠী ও দলের জেলা কমিটির সদস্য সাধন মুখোপাধ্যায়ের বিরোধ রয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং এ বার লোকসভা ভোটেও তার প্রভাব পড়েছে। যে কারণে সামগ্রিক ভাবে সাঁইথিয়া ব্লকের ছ’টি অঞ্চলে থেকে হাজার তিনেকের লিড পেলেও সেটা আহামরি নয় বলে তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন। সাবের আলি খান নিজেও দ্বন্দ্বের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘কারও নাম করছি না। যা বলার ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে বলেছি। তবে, দলের কেউ কেউ পিছন থেকে কলকাঠি না করলে ফল আরও ভাল হতে পারত।’’

    অন্য দিকে, মহম্মদবাজার ব্লকের যে অংশ সাঁইথিয়া বিধানসভায় রয়েছে, সেখানে চারটি অঞ্চলে বিজেপির থেকে পিছিয়ে থাকলেও ব্যবাধান কমিয়ে সামগ্রিক লিড পাওয়া গিয়েছে। স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার কোষাধ্যক্ষ উদয়শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেরুকরণের ভোট হয়েছে এখানে। মিল্টন রশিদ ভোট কাটবেন বলে মনে করা হয়েছিল। সেটা ঘটেনি। সিউড়ি দুই ব্লকে আমরা বরাবর হারি। এ বার এতটা পিছিয়ে থাকার কারণ বিধানসভা ভোট-পরবর্তী হিংসার প্রভাব কাটিয়ে না-উঠতে পারা।’’ সাঁইথিয়া শহরে সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে বলেও তিনি মেনেছেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)