দুই রাজ্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিতে দিন কাটিয়েছেন। পুরনো অভিজ্ঞতা ভোলেননি। আবার নতুন অভিজ্ঞতায় দুইয়ের মধ্যে তুলনাও এসে যায় স্বাভাবিক ভাবে। যেমন ছোটবেলায় ঝাড়গ্রামের কাঁটাপাহাড়ি গ্রামে কাটানো দিনগুলোর কথা। পরমাণু বিজ্ঞানী দীপঙ্কর কুন্ডু বললেন, ‘‘মাওবাদী পর্বে প্রায় এক বছর স্কুল বন্ধ ছিল। আতঙ্কে থাকতে হতো। সন্ধ্যের পর গুলির আওয়াজ। একবার জনসাধারণের কমিটির লোকজন পড়ুয়াদের নিয়ে মিছিল করিয়েছিল। আমি অবশ্য ওই দিন স্কুলে যাইনি। এখন তো সেই সব ভয়াবহ দিন অতীত। ওসব আর মনেও রাখতে চাই না। এখন জঙ্গলমহলে সবাই সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। পর্যটনের প্রসার ঘটেছে শুনতে পাই। এই পরিবর্তনটা জরুরি ছিল।’’
কাজের সূত্রে থাকেন তামিলনাড়ুর কালপক্কামে। সেখানকার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, ‘‘তামিলনাড়ুতে প্রচুর শিল্প। অনেক বাঙালি সেখানে কাজ করেন। বাংলা ও অসমের যুবকেরা বিভিন্ন দোকানেও কাজ করেন। তামিলনাড়ুতে বাঙালিদের সংখ্যাটাও কিন্তু কম নয়। পশ্চিমবঙ্গে কর্মসংস্থান জরুরি। পশ্চিমবঙ্গে পড়াশোনার পরিকাঠামো বেড়েছে। কিন্তু আমাদের রাজ্যে শিল্প চাই। শিল্প হলে কাজের সংস্থান হবে। বাংলায় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল। সেটা হলে বাংলার লাভ হতো।’’
কাজ কালপক্কামে। থাকেন অনুপুরমে। সংস্থার আবাসনে। অনুপুরম থেকে কালপক্কম গবেষণা কেন্দ্রের দূরত্ব ১০ কিমি। গবেষণা কেন্দ্রে চূড়ান্ত নিরাপত্তা। ফোন নিয়ে ঢোকা যায় না। দিনে সাড়ে ৮ ঘণ্টা কাজ করেন। শনি-রবি ছুটি। অবসরে কী করেন? ‘‘বিজ্ঞানীদের জীবনী পড়তে ভালবাসি। গান শুনতে খুবই ভালবাসি। অরিজিৎ সিংহ আর শ্রেয়া ঘোষাল পছন্দের শিল্পী। বাংলায় অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায়, হিন্দিতে সলমন খানের ছবি রিলিজ করলে দেখার জন্য মুখিয়ে থাকি। ক্রিকেট খেলতে খুবই ভালবাসতাম। আমি অলরাউন্ডার। এখানে ছুটির দিনে সহকর্মীদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলি।’’ কখনও সহকর্মীদের সঙ্গে বেড়াতে বা বাইক রাইডিংয়েও যান।
মনে পড়ে ছাত্র জীবনের বন্ধুদের? এখনও অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে দীপঙ্করের। বললেন, ‘‘মেদিনীপুরে কলেজে পড়ার সময় সায়েন্টিফ আড্ডা হতো। বিভিন্ন ভাষার সিনেমা দেখতাম। এখনও অবসরে সিনেমা দেখি। দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমাও দেখি। আমাদের গ্রামে কিংবা লালগড় চত্বরে সিনেমা হল ছিল না। মেদিনীপুর ডে কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে প্রথম সিনেমা দেখি সলমন খানের ‘বজরঙ্গী ভাইজ়ান’।’’ বছরে তিনবার বড় ছুটি। দুর্গাপুজোর সময় গ্রামে আসেন। মহাষ্টমীর দিন কাঁটাপাহাড়ি সর্বজনীনের মণ্ডপে গ্রামের পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে পুনর্মিলন হয়ে যায়। গ্রামের আশেপাশের বদলে যাওয়া জায়গাগুলি দেখতে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি।
তামিলনাড়ুতে মনে পড়ে বাংলাকে? দীপঙ্কর বলেন, ‘‘এখন দক্ষিণ ভারতীয় খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। এখানকার খাবার স্বাস্থ্যসম্মত। তবে আমার প্রিয় আলুপোস্ত ছাড়তে পারিনি। কাঁটাপাহাড়ি গেলে অনেকটা পোস্ত নিয়ে আসি। আবার বাবা-মা যখন আমার কাছে যখন আসেন তাঁরাও পোস্ত নিয়ে আসেন। এখানে আমাদের আবাসনের রান্না করেন লতা আক্কা (দিদি)। লতা দিদিকে ইউটিউব দেখিয়ে আলুপোস্ত রান্না শিখিয়ে দিয়েছি। উনিও এখন দারুণ আলুপোস্ত বানিয়ে দেন। এখন তো অনলাইনে চানাচুর মুড়ি, ইলিশ মাছও পাই। নিজেও অল্পস্বল্প রান্না শিখছি। ভাত-ডাল-চিকেন-ডিমের চলনসই পদ বানাতে শিখেছি। তামিল অল্প স্বল্প বুঝতে পারি। কিন্তু এখনও ভাষাটা রপ্ত করতে পারিনি। তবে বাঙালি সহকর্মীও কয়েকজন আছেন।’’