হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেও পর পর দু’বার আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে জয়ের মুখ থেকে ফিরে এসেছে বিজেপি। দু’বারই শেষ হাসি হেসেছে তৃণমূল। তবে, অল্প ব্যবধানে। ফলাফল নিয়ে ময়নাতদন্ত চলছে সব শিবিরেই। তবে, পর পর দু’বারই ‘নোটা’-য়
(নান অব দ্য অ্যাবভ) ভোটদানের প্রবণতা যে ভাবে সামনে এসেছে, তাতে চমকে গিয়েছে সব পক্ষই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাবাচ্ছে পরিসংখ্যান।
সদ্য হয়ে যাওয়া নির্বাচনে তৃণমূলের মিতালি বাগ ৬৩৩৯ ভোটে হারিয়েছেন বিজেপির অরূপকান্তি দিগারকে। আর ‘নোটা’য় ভোট পড়েছে ১৮ হাজার ৩১টি। অর্থাৎ, জয়ের ব্যবধানের প্রায় তিন গুণ। ২০১৯ সালের লোকসভায় বিজেপির তপনকুমার রায়কে
১১৪২ ভোটে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের অপরূপা পোদ্দার। ‘নোটা’য় ভোট পড়েছিল ২০ হাজার ৪৯৫টি। অর্থাৎ, দু’বারেই ‘নোটা’র ভোট কিছুটা এ দিক-ও দিক হলে ফল বদলে যেতে পারত বলে অনেকেই মনে করছেন।
প্রধান দুই প্রতিপক্ষ দল তৃণমূল এবং বিজেপির একাধিক নেতা মানছেন, যাঁরা নোটায় ভোট দিয়েছেন, তাঁদের মনে হয়েছে কোনও দলকেই ভোট দেওয়া ঠিক নয়। কোনও বিষয় সম্পর্কে দলের প্রতি তাঁদের অনীহা তৈরি হয়েছে। পর্যালোচনা করে সেই সব মানুষদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হবে বলে তাঁরা জানান।
বিজেপির রাজ্য সম্পাদক ও আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষ মনে করেন, ফলাফলের পিছনে নানা কারণের মধ্যে ‘নোটা’ও একটি বিষয়। তাঁর কথায়, ‘‘সব কিছুই আমাদের নজরে আছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বিশ্লেষণ চলছে।’’ আরামবাগের ফলাফলের ক্ষেত্রে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মুখপাত্র স্নেহাশিস চক্রবর্তীর বক্তব্য, কেন আরও মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিলেন না, সেই অনুসন্ধান চলছে। তিনি বলেন, ‘‘আরও নিবিড় জনসংযোগ করতে হবে। যাঁরা বিরোধীদের বা নোটায় ভোট দিয়েছেন, তাঁরাও ১০০ শতাংশ পরিষেবা পাবেন। তাঁদের কেন আমরা খুশি করতে পারলাম না, সেই অনুসন্ধান চলবে।’’
ভোটের লড়াইতে থাকা কোনও প্রার্থীকেই পছন্দ না হলেও মানুষ যাতে তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এবং নিজেদের অপছন্দের কথা জানানোর সুযোগ পান, সেই লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ভোটযন্ত্রে ‘নোটা’র অন্তর্ভুক্তি।
শ্রীরামপুর লোকসভায় এ বার ‘নোটা’য় ভোট পড়েছে ১৫ হাজার ৩৪টি। হুগলি লোকসভায় এই সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৫২টি। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে ‘নোটা’য় ভোট পড়েছে ৬২ লক্ষের বেশি। পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যা পাঁচ লক্ষ ছাপিয়ে গিয়েছে। এ রাজ্যে ‘নোটা’র ভোটে শীর্ষে বাঁকুড়া। এখানে ‘নোটা’য় ভোট পড়েছে ২৬ হাজার ২০৯টি। সর্বনিম্ন মালদহ দক্ষিণে, ২৭৯৭টি।
অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের ‘দুর্নীতি’, ধর্মের রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে বহু মানুষ বীতশ্রদ্ধ। তাঁদের একাংশ ‘নোটা’য় ভোট দেন। আবার গোষ্ঠীকোন্দলের জেরেও ‘নোটা’য় ভোট পড়তে পারে। এমন কারণ রাজনৈতিক দলের নেতারাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
‘নোটা’র পক্ষে সওয়াল করছেন প্রবীণ আইনজীবী শৈলেন পর্বত। এক সময় কংগ্রেসের সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতবর্ষে বহুদলীয় গণতন্ত্র চলে। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যেই বিভিন্ন দলের দুর্নীতি অসততা সামনে আসছে। ফলে, মানুষ কোনও দলকেই পছন্দ না করতেই পারেন। সে কথাই তো তাঁরা ভোটযন্ত্রে জানাচ্ছেন।’’