• শিকল-তালায় কিশোরকে বন্দী রাখল পরিবার, 'ট্রিটমেন্ট' ওঝা-তান্ত্রিকের জলপড়া-মাদুলি...
    আজকাল | ১৪ জুন ২০২৪
  • মিল্টন সেন,হুগলি: আষ্টেপৃষ্টে শিকল জড়িয়ে তালা মেরে রাখা হয়েছে দশম শ্রেণীর ছাত্রকে। তাও গত আট দিন ধরে। তাকে নাকি ভূতে ধরেছে! এই আশঙ্কায় চেন-তালা দিয়ে রাখা হয়েছে কিশোরকে। অমানবিক ছবি কেওটার হেমন্ত বসু কলোনিতে। শুরুতে কয়েকদিন ওঝা-তান্ত্রিকের জলপড়া মাদুলি ইত্যাদি দিয়ে 'ট্রিটমেন্ট'ও চলেছে। ফল না হওয়ায় ডাক্তারের দারস্ত পরিবার। আপাতত কিছুটা ঠিক। কিন্তু এভাবেই চেন তালা বন্দিদশায় কেটে গেছে আট দিন। ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরের বাড়িতে উপস্থিত বিজ্ঞান মঞ্চ এবং চুঁচুড়া থানার পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত আট দিন ধরে হেমন্ত বসু কলোনি এলাকায় এক স্কুল ছাত্রকে ভুতে ধরেছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। এটাও জানা যায় ওই কিশোরের পরিবার তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। ওঝার থেকে জল পড়া এনে খাওয়ানোর সঙ্গে পড়ানো হয়েছে মাদুলি। কোনও কাজ হয় নি। কিন্তু কেন চেন তালা দিয়ে বেঁধে রাখা হল? এই প্রশ্নের উত্তরে কিশোরের বাবা কার্তিক মালাকার জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র। দিন অটেক আগের ঘটনা। ছেলে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল সেদিন। বাড়িতে ফিরেই চেঁচামেচি শুরু করে। কোনও ভাবেই পরিবারের সবাই মিলেও তাকে ধরে রাখা যাচ্ছিল না। এলোপাথাড়ি হাত পা ছুঁড়ছিল। তারপরই তাকে শিকল দিয়ে বাধার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এলাকার অনেকেই তখন বলে, ওকে নাকি ভূতে ধরেছে। ওঝা-তান্ত্রিকের কাছে যেতে হবে। খবর নিয়ে পূর্ব বর্ধমানের বড়শূলে ওঝার বাড়ি যাওয়া হয়। টাকার বিনিময়ে জল পড়া ও মাদুলি নিয়ে আসা হয় সেখান থেকে। যদিও জল পড়া মাদুলিতে তাঁর ছেলের শারীরিক অবস্থার বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি। এরপর ডাক্তার দেখানো হয়। বন্দী কিশোরের দিদি টিনা মাল বলেছেন, এভাবে তাঁর ভাইকে বেঁধে রাখতে হয়েছে, তাঁদের সকলের খুবই কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। কী থেকে কী হচ্ছে, বুঝতে পারছেন না তাঁরা। ডাক্তার দেখিয়ে এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে, ভালো আছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য দিব্যজ্যোতি দাস বলেন, এখনও শহরাঞ্চলের মানুষ যে কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন তা এই ঘটনা থেকেই পরিষ্কার। তিনি কিশোরের পরিবারকে বলেছেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। কুসংস্কার দূর করতে অবিলম্বে ওই এলাকায় সচেতনতা শিবির করার কথা বলেছেন তিনি।ছবি পার্থ রাহা।
  • Link to this news (আজকাল)