গোবিন্দ রায়: একেই বলে নাড়ির টান! দাম্পত্য কলহে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক আটকে রয়েছে আইনি লড়াইয়ে। সেই লড়াইয়ের মাঝে অনন্য মাতৃত্বের নজির দেখা গেল কলকাতা হাই কোর্টে। প্রায় এক বছর পর মাকে দেখতে পেয়ে, বাবার কোল থেকে মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল একরত্তি শিশুকন্যা। শুক্রবার যার সাক্ষী রইল বিচারপতি অমৃতা সিনহার ভরা এজলাস। শিশুর এই মাতৃ আকর্ষণ দেখে বিচারপতি সিনহাও আপাতত বাবার পরিবর্তে মায়ের হাতেই সন্তানকে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। তবে আগামী মঙ্গলবার এই মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন ধার্য করেছে উচ্চ আদালত। সেদিন সন্তান-সহ মাকে ফের আদালতে হাজির থাকতে হবে।
আবেদনকারীর আইনজীবী ঋতুপর্ণা ঘোষ জানান, ঘটনার সূত্রপাত গত বছর। ২০২৩ সালের জুন মাসে স্ত্রীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ এনেছিলেন স্বামী। ঘটনায় বজবজের (Budge Budge) বাসিন্দা বছর চল্লিশের আলমগির (নাম পরিবর্তিত) ও তাঁর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে স্ত্রী রোজিনাকে (নাম পরিবর্তিত) গ্রেপ্তার (Arrest) করে পুলিশ। সেই থেকেই মায়ের কোল ছাড়া একরত্তি মেয়ে। পরে অবশ্য জামিনে মুক্তি পান রোজিনা। জেল থেকে বেরিয়েই মেয়ের খোঁজ করতে থানায় হাজির হন। পুলিশের কাছে গিয়ে জানতে পারেন, বাবার কাছে আছে মেয়ে। মেয়েকে হেফাজতে নিতে চেয়ে এবং স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার (Domestic Violence) পালটা অভিযোগ করেন রোজিনা।
তাঁর আইনজীবীর দাবি, এর আগেও নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে হাই কোর্টের (Calcutta HC) দ্বারস্থ হন রোজিনা। চলতি বছরের শুরুর দিকে মামলার প্রাথমিক শুনানি পর্বে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত শিশু সন্তানের (Child) কথা ভেবে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে একসঙ্গে থাকার পরামর্শ দেন। সেইসঙ্গে মামলার পরবর্তী শুনানিতে রাজকন্যাকে আদালতে নিয়ে আসারও নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। বর্তমানে বিচার্য বিষয় বদলে মামলা বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। সেইমতো শুক্রবার মেয়েকে নিয়ে আসেন আলমগির।
বিচারপতির সঙ্গে বাবা-মায়ের কথপোকথনের মাঝেই হঠাৎই বাবার কোল থেকে এক ঝটকায় ঝাঁপ দিয়ে মায়ের কোলে লাফিয়ে চলে আসে শিশুকন্যা। তার মায়ের কাছে থাকার কৌতূহল দেখে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ ভাঙাতে উদ্যোগী বিচারপতি সিনহা। মাকে প্রশ্ন করেন, তিনি কী চান? উত্তরে মা রোজিনা জানান, মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি করতে পারেন। যে কোনও জায়গায় থাকতে পারেন। আদালতে এও জানান যে তিনি এখন দুই ভাইয়ের কাছে থাকেন। কিন্তু সংশয় প্রকাশ করে বিচারপতি বলেন, ?ভাইরা কি সারা জীবন দেখতে পারবে??
এদিকে মেয়ের বাবা আলমগিরের বক্তব্য, তিনি স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে চান না। কারণ স্ত্রী তাঁকে খুনের চেষ্টা (Attempt to murder) করেছিলেন বলে পালটা অভিযোগ তাঁর। যদিও বাচ্চার বাবার উদ্দেশে বিচারপতির পরামর্শ, ?স্ত্রী-সন্তানকে তো দেখতেই হবে। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে থাকুন। না থাকলেও তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হবে। সেটা তো অস্বীকার করতে পারবেন না।? যদিও এদিন মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়নি। কারণ মামলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না আলমগির। তিনিই আদালতের কাছে সময় চান। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় মামলার শুনানি ধার্য করেছে আদালত। এই সময় পর্যন্ত শিশুকন্যা মায়ের কাছে থাকবে বলেও জানিয়ে দেন বিচারপতি।