পাহাড় থেকে প্রবল বেগে জল নামছে তিস্তা দিয়ে, সতর্কবার্তা পেল জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। সিকিমে প্রবল বৃষ্টির জেরে শুক্রবার রাতের পর থেকে সমতলে তিস্তায় জল বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সেই মতো জলপাইগুড়ি প্রশাসন থেকে তিস্তার দু’পারে নজর রাখা হয়েছে। এ দিকে, সমতলেও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। জলপাইগুড়ি, কালিম্পং এবং আলিপুরদুয়ারে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর পুর্বাভাস দিয়েছে, বৃষ্টির নিরিখে এই তিন জেলায় ‘লাল সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে। তিস্তায় ‘হলুদ সতর্কতা’ জারি হয়েছে এ দিন। মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত অসংরক্ষিত এলাকায় ‘হলুদ সতর্কতা’ রয়েছে। জলঢাকা নদীতে সংরক্ষিত এবং
অসংরক্ষিত দুই এলাকাতেই ‘হলুদ সতর্কতা’ জারি রয়েছে। তিস্তার জল কতটা বাড়ছে তাতে নজরদারি করছে সেচ দফতর। সেবক থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত তিস্তার নদী বাঁধে ক্ষতি হয়েছে। জল না কমলে কতটা ক্ষতি, তা বোঝা যাবে না।
সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার (উত্তর-পূর্ব) কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, “তিস্তার বাঁধের প্রাক্বর্ষা মেরামতির কাজ প্রায় সবই শেষ করা হয়েছিল। কয়েকটি জায়গায় বাদ ছিল। সেগুলির খবরাখবর নেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত বড় ক্ষয়ক্ষতি নেই। তবে নদী নতুন নতুন এলাকায় ঢুকে পড়ছে।”
গত বছর সিকিমে বিপর্যয়ের জেরে তিস্তা নদী গতিপথ বদলেছে। তিস্তা নদীখাত উঁচুও হয়েছে। তার জেরেই সমতলে তিস্তা ফুলেফেঁপে উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে সিকিমের মঙ্গন থেকে শুরু করে অন্যান্য এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের খবর এসেছে সেচ দফতরের কন্ট্রোল রুমে। শুক্রবার মেখলিগঞ্জে বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে বইছে তিস্তা। সেচ দফতর সূত্রের খবর, যে জল এখন পাহাড় থেকে গড়িয়ে আসছে সঙ্গে পলি নিয়ে আসছে। তিস্তা নদীখাত আরও উঁচু হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গজলডোবা ব্যারাজ থেকে এ দিনও জল ছাড়া হয়েছে। সিকিমের জল পুরোপুরি এসে পৌঁছলে রাত বা আজ, শনিবার থেকে জল ছাড়ার মাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে বলে দাবি ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের।
জলপাইগুড়ির সদর মহকুমাশাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “সিকিমে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। সে কারণে তিস্তায় জল বাড়তে পারে বলে সতর্কতা রয়েছে। তিস্তার দু’পারে প্রশাসনের তরফে নজরদারি রয়েছে। বাসিন্দারা জলবন্দি হয়ে রয়েছেন এমন খবর এখনও নেই।”
লোকালয়ে হাতি
জলপাইগুড়ি: তুমুল বৃষ্টির রাতে লোকালয়ে চলে এসেছিল পঁচাত্তর থেকে আশিটি হাতির দল। সকালের আলো ফুটতেই নানা দলে ভাগ হয়ে লোকালয়ে বিচরণ শুরু করে বুনো হাতিগুলি। চলে আসে জলপাইগুড়ি শহরের কাছাকাছিও। শুক্রবার বেলা পর্যন্ত জলপাইগুড়ি লাগোয়া পাতকাটা-পাহাড়পুরে দাপিয়ে বেড়িয়ে বনকর্মীদের তাড়ায় দলটি লোকালয় ছেড়ে তিল্তার চরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দিকে, তিস্তায় প্রবল বেগে জল বইতে থাকায় হাতির দল নদী টপকে জঙ্গলে যেতে পারবে না বলেই মনে করছেন বনকর্মীদের একাংশ। সে ক্ষেত্রে গ্রাম-জনপদের পাশ দিয়ে বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলে ফিরতে হবে দলটিকে। বন দফতরের বেলাকোবার রেঞ্জার চিরঞ্জিৎ রায় বলেন, “হাতির দলকে লোকালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বনকর্মীরা হাতির দলের গতিবিধির ওপরে নজরদারি চালাচ্ছেন।” জলপাইগুড়ি বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার দর্জি শেরপা বলেন, “সারা রাত আমরা পাহারা দিয়েছি। আরও হাতি লোকালয়ে অথবা আশপাশে রয়েছে কি না দেখা হচ্ছে। তবে আপাতত লোকালয়ে কোনও হাতি নেই বলেই মনে হচ্ছে।”
নিজস্ব সংবাদদাতা