• গোষ্ঠীকোন্দল ঠেকাতেই কি প্রার্থী মধুপর্ণা, উঠছে প্রশ্ন
    আনন্দবাজার | ১৫ জুন ২০২৪
  • প্রত্যাশা মতোই মতুয়া সমাজের এক মহিলাকে বাগদা বিধানসভার উপ নির্বাচনে প্রার্থী করল তৃণমূল।

    শুক্রবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে বাগদার তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে মধুপর্ণা ঠাকুরের নাম জানানো হয়। তিনি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুরের ছোট মেয়ে। মধুপর্ণার নাম কয়েক দিন ধরেই প্রার্থী হিসেবে চর্চায় ছিল। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস আগেই জানিয়েছিলেন, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব মতুয়া সমাজের মধ্যে থেকে কোনও মহিলাকে প্রার্থী করতে চলেছেন।

    মধুপর্ণার বয়স সবে পঁচিশ পেরিয়েছে। জ়ুয়োলজিতে স্নাতক। এখন এমএসসি পড়ছেন। সক্রিয় রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা কার্যত নেই। প্রার্থী হয়ে কী বলছেন তিনি? মধুপর্ণার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ দিতে চাই, কারণ তিনি আমাকে বাগদার মতুয়াদের উন্নয়ন করার সুযোগ করে দিয়েছেন।’’

    লোকসভা ভোটে বাগদা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী ২০ হাজার ৬১৪ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন। ফলে এই কঠিন আসনে জিততে কতটা আশাবাদী মধুপর্ণা? তাঁর কথায়, ‘‘নির্বাচন তো কঠিন হবেই। তবে আমার আশা, জিততে পারব। মতুয়াদের ভুল বোঝানো হয়েছিল। আশা করছি, এ বার তাঁরা আমাদের পাশে থাকবেন।’’

    ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না মধুপর্ণা। সম্প্রতি মতুয়া ধর্ম মহামেলা চলাকালীন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর তালা ভেঙে বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরের ঘরের দখল নেন বলে অভিযোগ ওঠে। বীণাপাণির ঘরেই মমতা-মধুপর্ণারা থাকতেন।

    তারপর লোকসভা ভোটের সময়ে মধুপর্ণা ওই ঘটনার প্রতিবাদে অনশন করেছিলেন। তখনই তিনি প্রচারের আলোয় উঠে আসেন। মধুপর্ণা বলেন, ‘‘ওটা ছিল পারিবারিক বিষয়। বিজেপির ক্ষমতা ব্যবহার করে আমাদের ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। আর ভোটে দাঁড়ানোটা রাজনৈতিক বিষয়। ভোটে লড়তে আমার মা আমার প্রেরণা, শক্তি।’’

    কী বলছেন মমতা ঠাকুর?

    তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্বজিৎ (তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি) দিদির কাছে (মুখ্যমন্ত্রী) মধুপর্ণার নাম বলেছিল প্রার্থী করতে। দিদিকে ধন্যবাদ, বাগদার মানুষের কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। উনি মধুপর্ণাকে প্রার্থী করে মতুয়াদের আরও এক বার সম্মান দিলেন। এতে মতুয়াদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।’’ বিশ্বজিতের বক্তব্য, ‘‘আমি এ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না, তা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। দল যাঁকে প্রার্থী করেছে, আমার এক মাত্র লক্ষ্য তাঁকে জেতানো। মধুপর্ণার বাবা কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর এবং মা মমতা ঠাকুর দু’জনেই বনগাঁর সাংসদ ছিলেন। সেই সূত্রে মধুপর্ণা বাগদার মানুষের কাছে পরিচিত মুখ। তাঁকে প্রার্থী করায় আমাদের সুবিধা হয়েছে।’’

    রাজনৈতিক মহলের অনেকে মনে করছেন, বাগদায় বিশ্বজিতের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ ছিল, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল। এই অল্প সময়ের মধ্যে সে সব মেটানো নেতৃত্বের কাছে চ্যালেঞ্জ। বাগদা থেকে কাউকে প্রার্থী করা হলে কোন্দল আরও মাথা চাড়া দেওয়ার আশঙ্কা ছিল বলে তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে। সে কারণেই বেছে নেওয়া হল রাজনীতিতে নতুন মুখ মধুপর্ণাকে। তা ছাড়া, বাগদা মতুয়া অধ্যুষিত এলাকা। মতুয়াদের মধ্যে মতুয়া ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের প্রভাব আছে। লোকসভা ভোটের প্রার্থী বিশ্বজিৎ মতুয়া ছিলেন না। মতুয়াদের একাংশ এ বার মতুয়াদের মধ্যে থেকে প্রার্থী করার দাবিও তুলেছিলেন। মধুপর্ণার নাম ঘোষণার পর থেকে বাগদার তৃণমূলের একাংশের নেতা-কর্মীরা যদিও ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি ছিল, স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করার। তৃণমূলের বাগদা পূর্ব ব্লকের সভাপতি পরিতোষ সাহা ২০২১ সালের ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা দল করি। শীর্ষ নেতৃত্ব যাঁকে প্রার্থী করেছেন, তাঁকে জেতাতে আমরা লড়াই করব।’’

    মধুপর্ণার প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূল যাকেই প্রার্থী করবে, বাগদার মানুষ তাকেই আবার হারাবে। লোকসভা ভোটের তুলনায় আমাদের জয়ের ব্যবধান এ বার আরও বাড়বে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)