মাস দুয়েক আগে কলকাতার গার্ডেনরিচে ‘বেআইনি’ ভাবে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই বিপর্যয়ের পরে কলকাতা পুরসভা নড়ে বসলেও গ্রামীণ হাওড়ার কিছু এলাকায় বেআইনি ভাবে বহুতল নির্মাণের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। তাতে যেমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকছে, তেমনই ওই সব বহুতলের ফ্ল্যাটের ক্রেতারা নানা সমস্যারও সম্মুখীন হচ্ছেন।
পঞ্চায়েত এলাকায় বেআইনি বাড়ি তৈরি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় পঞ্চায়েতমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৬ সালের মাঝামাঝি নতুন বিল্ডিং আইন তৈরি হয়। তাতে বলা হয়, দোতলার বেশি উচ্চতার আবাসন নির্মাণ করতে হলে জেলা পরিষদের অনুমতি বাধ্যতামূলক। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে গ্রামীণ হাওড়ায় ওই আইন শুধু খাতায়-কলমেই থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
আমতার গুজারপুরে একাধিক নির্মীয়মাণ বহুতলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং তদন্ত চেয়ে জেলা পরিষদে চিঠি দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। আন্দুলের ঝোড়হাটে আবার একটি পাঁচতলা আবাসনের নির্মাণকাজ বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন এলাকাবাসী। ডোমজুড়ে একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনও বেআইনি ভাবে নির্মিত হয়েছে বলে অভিযোগ।
জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দোতলার বেশি উচ্চতার বহুতল করার ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের অনুমতি নিতে হয়, সেটা ঠিক। তবে, এই আইনটি নতুন হয়েছে। তার আগে পঞ্চায়েত স্তরেই অনুমতি দেওয়া হত। যাই হোক, এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, সেটা বলা যাবে না। তবে, অভিযোগ যেহেতু হয়েছে, তদন্ত করে দেখা হবে।’’
আমতার গুজারপুরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এখানে একাধিক দাগ নম্বরে আলাদা আলাদা করে বহুতল করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্র দু’টি নির্মাণের মধ্যে প্রয়োজনীয় ছাড় রাখা হয়নি। কোথাও চারতলার অনুমতি নিয়ে পাঁচতলা, কোথাও আবার দোতলার অনুমতি নিয়ে চারতলা আবাসন করা হয়েছে। কোথাও আবার অনুমতি ছাড়াই বহুতল উঠেছে। আরও একটি ভবন তৈরি হয়েছে এমন জমিতে, যার কিছু অংশে ‘বর্গা’ রেকর্ডও আছে।
গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ, ওই সব আবাসনের ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে বিপদে পড়তে হচ্ছে ক্রেতাকে। তাঁরা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাচ্ছেন না। অনেক জায়গায় নিকাশি ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়াল তোলা হয়েছে।
ওই এলাকায় বহুতল নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত প্রোমোটার বসন্ত সামন্ত। অভিযোগ উড়িয়ে তাঁর দাবি, ‘‘নিয়ম মেনেই কাজ করেছি। কিছু মানুষ আমার কাছে চাঁদার জন্য এসেছিলেন। আমি না দেওয়াতেই তাঁরা জেলা পরিষদে অভিযোগ করেছেন।’’
ডোমজুড়ে একটি পাঁচতলা বাণিজ্যিক ভবন অনুমোদন না নিয়ে ছ’তলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। নির্মাণটির প্রোমোটার শেখ লোকমান স্বীকার করেন অনুমোদন ছাড়া কিছু বাড়তি নির্মাণকাজ তিনি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাড়তি নির্মাণকাজের অনুমোদন চেয়ে জেলা পরিষদে আবেদন করেছি।’’ এই ভবনটির বিরুদ্ধেও জেলা পরিষদে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।
আন্দুলের ঝোড়হাট মিলনী সঙ্ঘের কাছে যে পাঁচতলা আবাসন নিয়ে এলাকাবাসীর আপত্তি, তার সামনের রাস্তা মাত্র পাঁচ ফুট চওড়া। তাঁদের প্রশ্ন, সঙ্কীর্ণ রাস্তার পাশে অত বড় নির্মাণ হল কী করে? শুধু তা-ই নয়, ওই আবাসনে আরও দু’টি তল করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। নির্মাণটির প্রোমোটার মহম্মদ সাকিবের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইলে মেসেজ পাঠানো হলেও জবাব মেলেনি।
এলাকার এক বাসিন্দার ক্ষোভ, ‘‘বহুতলের বারান্দাগুলি রাস্তার উপরে ঝুলে রয়েছে। ওই পাঁচ ফুটের রাস্তার উপরেই ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখা হয়েছে। জল নিকাশির পথও বন্ধ।’’
ঝোড়হাট পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় অধিকারী বলেন, ‘‘এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে প্রোমোটারকে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’