সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে মধু, কাঁকড়া সংগ্রহ করেই চলত সংসার। পেটের টানে গভীর জঙ্গলে গিয়েই ঘটল বিপদ। নৌকা থেকে বাঘে টেনে নিয়ে গেল পাথরপ্রতিমার জি প্লট পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা, মউলে গোপাল মল্লিককে। শনিবার সকালে সুন্দরবনের কলস দ্বীপের কাছে জঙ্গলে ওই ঘটনার পরে রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি ওই মধু সংগ্রহকারীর।
সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার সন্দীপ করা বলেন, ‘‘বন দফতরকে বিষয়টি জানিয়েছি। ঘটনাটি বারুইপুর পুলিশ জেলার মধ্যে ঘটেছে।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা বনাধিকারিক মিলন মণ্ডল বলেন, ‘‘ঘটনাটি ব্যাঘ্র প্রকল্পের নিষিদ্ধ এলাকায় ঘটেছে। বন দফতরে কোনও অভিযোগও হয়নি।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপাল-সহ জি প্লট পঞ্চায়তের সত্যদাসপুর গ্রামের আট যুবক মধু ও কাঁকড়া সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। সরকারি নিয়ম মেনে, বৈধ অনুমতিপত্র নিয়েই তাঁরা জঙ্গলে মধু আনতে গিয়েছিলেন বলে দাবি ওই মউলেদের। মধু ভেঙে এ দিন সকালে কলস দ্বীপের কাছে নৌকায় বসে খাবারের তোড়জোড় করছিলেন তাঁরা। আচমকাই তাঁদের সামনাসামনি চলে আসে বাঘ। সঙ্গীরা জানান, তাঁরা বহু চেষ্টা করেও গোপালকে উদ্ধার করতে পারেনি। বাড়ি ফিরে তাঁরা প্রশাসন ও বন দফতরের কাছে বিষয়টি জানান। তারপরেই প্রশাসন গোপালের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে।
গোপালের সঙ্গীরা জানান, তাঁরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাঘের থাবা পড়ে গোপালের ঘাড়ে। গোপালের সঙ্গী এক মউলের কথায়, ‘‘গোপালকে মুখে নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে যায় বাঘটি। আমরা অনেক চেষ্টা করেও প্রতিরোধ করতে পারিনি।’’
গ্রাম সূত্রে খবর, দারিদ্র্য নিত্যসঙ্গী ছিল গোপালের পরিবারে। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে কোনও রকমে চলছিল বছর তিরিশের গোপালের সংসার। পরিজনেরা জানান, জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করে ফিরলে তবেই অন্নসংস্থান হয়। গোপালের স্ত্রী পার্বতী বলেন, ‘‘থানায় বিষয়টি জানিয়েছি। পুলিশ যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনে।’’প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নিখোঁজ গোপাল ও তাঁর সঙ্গীরা সুন্দরবন টাইগার রিজ়ার্ভের জঙ্গলে প্রবেশ করেছিলেন। ওই জঙ্গলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সারা বছর। তবুও অনেক মৎস্যজীবী নিয়ম না মেনে জঙ্গলে প্রবেশ করেন ও বিপদের মুখে পড়েন।