জেলার দু’টি লোকসভাতেই পদ্ম ফুটেছে। বিরোধী দলনেতার নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামেও এগিয়ে বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারী যেখানকার ভোটার, সেই নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতে কিন্তু এ বার লোকসভা ভোটে পিছিয়ে পদ্ম। অবশ্য শুভেন্দু যে বুথের ভোটার, সেই নন্দনায়েকবাড়ে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে।
গত বছরই ছিল পঞ্চায়েত ভোট। তখন ওই বুথ আর গ্রাম পঞ্চায়েত, দুই-ই দখল করেছিল বিজেপি। বছর ঘুরতে না ঘুরতে ছবিটা বদলে যাওয়ায় চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
একুশের বিধানসভা ভোটে শুভেন্দু নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়া থেকেই নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের নন্দনায়েকবাড় বুথে ভোট দেন তিনি। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে ওই বুথে জিতেছিল বিজেপি। নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতেও ১৭টি আসনের ন’টি পেয়েছিল বিজেপি, বাকি আটটিতে জেতে তৃণমূল। এ বার লোকসভায় সেই নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ২১৪ ভোটে পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতে ১৭টি বুথ। মোট ভোটার ১৩,০৪৪ জন। সেখানে এ বারের তমলুক লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য পেয়েছেন ৬৩১১টি ভোট। আর বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রাপ্তি ৬০৯৭টি ভোট। অর্থাৎ ২১৪ ভোটে পিছিয়ে বিজেপি। ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূল পেয়েছে ৪৮% ভোট। বিজেপি পেয়েছে ৪৭% ভোট।
একুশের বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ১৯৫৬ ভোটে হারিয়ে শুভেন্দু নন্দীগ্রামের বিধায়ক হন। এ বার লোকসভায় নন্দীগ্রামে সেই ব্যবধান বেড়ে আট হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। জেলার দু’টি লোকসভা তমলুক ও কাঁথিতে বিজেপি জিতেছে। এই সাফল্যের মাঝে যেন কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে শুভেন্দুর নিজের পঞ্চায়েত এলাকায় পদ্মের পিছিয়ে থাকা।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, “এটাই স্বাভাবিক। কিছু কিছু জায়গায় জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসনিক স্তরে রদবদল ঘটিয়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছে। তবে বিজেপির ভিত নড়ে গিয়েছে।” স্থানীয় সূত্রে খবর, নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মিশ্র সম্প্রদায়ের বসবাস। এখানে প্রায় পাঁচ হাজার সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পালের ব্যাখ্যা, “২০২১ সালে বিধানসভা ভোটেও ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে আমরা ১৫০ ভোটে পিছিয়ে ছিলাম। ওখানে কয়েকটি বুথে সংখ্যালঘু ভোটার বেশি থাকায় এ বারও আমরা পিছিয়ে। তবে ওই পঞ্চায়েতে আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।”
বিজেপির অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে অন্য তত্ত্বও। সূত্রের খবর, গোটা নন্দীগ্রাম-১ ব্লক জুড়ে পদ্ম শিবিরে শুভেন্দু ‘ঘনিষ্ঠ’ মেঘনাদের প্রভাব রয়েছে। তবে শুধু নন্দীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মেঘনাদের প্রভাব মানতে নারাজ বিজেপির একাংশ। সেই কোন্দলই ভোটেও কাঁটা হয়েছে। সিপিএমের নন্দীগ্রাম এরিয়া কমিটির সম্পাদক তথা জেলা কমিটির সদস্য মহাদেব ভুঁইয়ার কথায়, “ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির আদি এবং নব্য গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব রয়েছে। সে জন্যই এই ফল হয়েছে।”