শেষ পর্যন্ত গার্ডেনরিচে বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় আদালতে চার্জশিট পেশ করল কলকাতা পুলিশ। সেই চার্জশিটে ছ’জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত শুক্রবার আলিপুর আদালতে এই চার্জশিট জমা দিয়েছেন কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা। চলতি বছর ১৭ মার্চ গভীর রাতে গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ে। সেই ঘটনার পর ৮৯ দিন ধরে তদন্ত চলে। তদন্তের পর ৭৩০ পাতার চার্জশিট জমা দেয় কলকাতা পুলিশ। ওই চার্জশিটে অভিযুক্ত ছ’জনের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও সরকারি আদেশ না মানার মতো একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন প্রোমোটার, জমির মালিক এবং ঠিকাদার। তাঁরা সকলেই বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন।
তবে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি পলাতক। তাঁর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, ওই চার্জশিটে মোট ১৭০ জনকে সাক্ষীর তালিকায় রাখা হয়েছে। সিআরপিসি ১৭৩ (৮) ধারায় পরবর্তী তদন্তের পাশাপাশি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করার পথও খোলা রেখেছে কলকাতা পুলিশ। বেআইনি বহুতলটি ভেঙে পড়ার ঘটনায় প্রথমে ন’জন মারা গেলেও, পরে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩। তাই এই ঘটনাকে লঘু করে দেখার কোনও অভিপ্রায় নেই পুলিশ-প্রশাসনের। ঘটনার পরদিন সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, এই বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসন কোনও রকম রেয়াত করবে না। তার পরেই কলকাতা পুরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্তের কাজে গতি বাড়িয়েছিল পুলিশ। তাতে তিন মাসের মধ্যে চার্জশিট পেশ করা সম্ভব হয়েছে।
অন্য দিকে খবর, কলকাতা পুলিশের এমন কড়া পদক্ষেপে খুশি পুরসভা কর্তৃপক্ষ। কারণ, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দরের অংশ ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ড। তাই ওই ওয়ার্ডে বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় সবচেয়ে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন মেয়র স্বয়ং। ঘটনার পরেই কলকাতা পুরসভায় এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুর আধিকারিকদের। সঙ্গে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দিতে কলকাতা পুলিশকে যেন পুরসভার তরফে সব রকমের সহযোগিতা করা হয়। তার পরেই কলকাতা পুলিশের সঙ্গে গার্ডেনরিচের ঘটনা নিয়ে এগিয়েছে পুরসভা। এই ঘটনায় পুরসভার তিন জন ইঞ্জিনিয়ারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সেই ইঞ্জিনিয়ারদের উপর থেকে এখনও সাসপেনশন ওঠেনি বলেই কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর।