• কয়েকদিন পরেই রেজাউলের স্বপ্নের উড়ান সফল হবার আশা, ঘোলা গ্রাম থেকে উড়বে হেলিকপ্টার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৭ জুন ২০২৪
  • আমিনুর রহমান, বর্ধমান, ১৬ জুন — আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন। আর তারপরেই পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমার ঘোলা গ্রাম থেকে উড়তে পারে আস্ত একটা হেলিকপ্টার। প্রায় একটানা তিন বছর ধরে বাড়ির পাশে রেজাউল সেখ নামে এক যুবক একক প্রচেষ্টায় তৈরি করে ফেলেছেন ওই হেলিকপ্টার। নিজেই কারিগর তিনি। আবার আকাশ পাড়ি দেবার জন্য হেলিকপ্টারে চালক বা পাইলট হিসাবে তিনিই বসবেন। ইঞ্জিনিয়ার তো ননই, এমনকি সামান্য লেখাপড়া জানা এক যুবক সমস্ত রকম প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন ওই হেলিকপ্টার। এই কারিগরি শিক্ষা কারও যেমন মেলেনি, আবার এই কাজে কারও সহায়তা নেয়নি সে। রেজাউল সেখ সম্ভবত ভারতের মধ্যে প্রথম এই ধরনের অসাধ্য সাধন করে দেখাতে চলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দোপাধ্যায় সহ একাধিক জননেত্রী, জননেতার সঙ্গে দেখা করে হেলিকপ্টার উড়ানোর অনুমতি নিয়ে রেখেছেন। জীবনের সমস্ত আয়ের অর্থ এমনকি যাবতীয় সামগ্রী মডগেজ রেখে তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে নেমে পড়েছেন। তাঁর স্বপ্ন, সফল হলে জেলা, রাজ্য তথা দেশের মধ্যে এক ইতিহাস সৃষ্টি হবে বলে তার আশা।

    একটা সময় রেজাউল সেখ মোটর সাইকেল গ্যারাজে কাজ করতেন। পরে জেসিবি কিনে পেশা শুরু তাঁর। তাঁর বাবা মহম্মদ ইয়াসিন সেখ তাঁকে বলতেন, এমন একটা কিছু কর, যা দেশের মানুষ দেখতে আসবে। একজন জেসিবি-র চালক ও মালিক সেই থেকেই স্বপ্ন দেখতো একদিন সে একটা হেলিকপ্টার চালিয়ে আকাশে উড়াবে। আর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে একদিন তিল তিল করে জমানো টাকা নিয়ে শুরু করে দেয় হেলিকপ্টার তৈরি। প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করে তাঁর স্বপ্নের উড়ান সফল করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। জমানো টাকা, জমি সহ সব কিছু বিক্রি, মর্টগেজ রেখে হেলিকপ্টার তৈরিই তাঁর শেষ লক্ষ্য। প্রথমদিকে গ্রামের লোকজন অবাক হয়ে যান তাঁর ওই কর্মকাণ্ড দেখে। তারপর বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গায় যখন হেলিকপ্টারের কাঠামো তৈরি অনেকটা এগিয়ে যায়, তখন কিন্তু খবর ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে লোকজন আসতে শুরু করেন পূর্ব বর্ধমানের ঘোলা গ্রামে। রেজাউল সেখ-এর ওই হেলিকপ্টার তৈরি দেখতে। বিভিন্ন মিডিয়ায় তার খবর ছড়িয়ে পড়ে। দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকাতেও এর আগে খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এবার তার শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে বলে দাবি রেজাউলের।

    বাড়ির পাশে রেজাউল যে হেলিকপ্টার তৈরি করছেন, তার প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে বলে দাবি তাঁর। ওই হেলিকপ্টারের ওজন প্রায় ৪ টনের মতো। আর বহন ক্ষমতা আড়াই টনের কাছাকাছি। নেতা মন্ত্রীদের চাপার জন্য যে সব হেলিকপ্টার থাকে, সেগুলো ১ টন ২০০ কেজির মতো। কিন্তু এটি তৈরি করা হচ্ছে সাধারণত মালপত্র বহন করতে কাজে লাগানোর জন্য। প্রায় ৪১ ফুট লম্বা এই হেলিকপ্টার উড়ানোর জন্য ৪০০ হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন আছে। বসতে পারবেন পাইলট বা চালক সহ পাঁচজন যাত্রী। আর এটি চালানোর জন্য পাইলট রেজাউল নিজেই। তাঁর বক্তব্য, আমিই এর জন্মদাতা। আমি খুঁটিনাটি সব জানি। তাই আলাদা করে চালকের প্রয়োজন নেই। রেজাউল এত বড়ো একটা হেলিকপ্টার তৈরি করতে শুধু মাত্র ছেনি, হাতুড়ি, ওয়েল্ডিং মেশিন সহ চারটি সামান্য যন্ত্র ব্যাবহার করে অসাধ্য সাধন করেছেন। সফল হলে বিরল ঘটনা হয়ে থাকবে জেলা তথা দেশে।

    রেজাউলের এই অসাধ্য সাধন করতে অনেকটাই স্বার্থ ত্যাগ করতে হয়েছে। এরই মধ্যে তাঁর এক মেয়ের মৃত্যু হয়েছে ট্রেনে কাটা পড়ে। সে নিজেও দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য রোগে ভুগছিলেন। স্মৃতি চলে যায় তাঁর। কিন্তু আস্তে আস্তে সুস্থ হবার পর আবার কাজে লেগেছেন। আর হয়তো এক মাসের মধ্যে হেলিকপ্টার আকাশে উড়বে বলে দাবি তাঁর। কিন্তু কিভাবে তাঁর এই স্বপ্নপূরণ সম্ভব হল? জানা গিয়েছে, মাত্র পঞ্চম শ্রেণী উত্তীর্ণ রেজাউল নিজের চেষ্টায় একাধিক প্রযুক্তির ব্যবহার জানে। যা একজন ভালো ইঞ্জিনিয়ারকে হার মানাবে। হেলিকপ্টার তৈরিতে নামার আগে প্রায় পাঁচ বছর ধরে সে বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ ও কারিগরিতে যুক্ত ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস সেটা কাজে লাগিয়েই একদিন দেশের মানুষের ভালোবাসা পাব হেলিকপ্টার চড়ে আকাশ ছুঁয়ে যেতে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)