এ কী! এটাই কি বহরমপুরের কংগ্রেস অফিস? শঙ্খ ঘোষের কবিতার লাইন মনে পড়ছিল, ‘সবদিক এত চুপচাপ কেন, সেই ছেলেগুলি কোথায়?’ আর ‘শোলে’র বিখ্যাত ডায়ালগ, ‘ইতনা সন্নাটা কিঁউ হ্যায় ভাই?’
রাত মোটে সাড়ে ৯টা। ভোটের সময়। এখন তো চারদিক গমগম করার কথা! অন্তত গোটা পাঁচেক এসইউভি, গোটা দশেক স্বঘোষিত নেতা, চাড্ডি ফড়ে, গোটা কুড়ি উমেদার, কিছু ফুল নেতা এবং কিছু হাফ নেতা তো থাকতেই হবে। কোথায় কী! বহরমপুর জেলের পাঁচিলের উল্টো দিকে আলিসান বাড়ি সুনসান। বাড়ির সামনের চেয়ারগুলোও ফাঁকা। দেখে ওই কথাটাই মনে হল, ইতনা সন্নাটা কিঁউ হ্যায় ভাই? চারদিক এত চুপচাপ কেন?
কলকাতা থেকে বহরমপুর গিয়েছি আনন্দবাজার অনলাইনের লোকসভা ভোটের বিশেষ শো ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’ সিরিজ়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে। আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া আছে। যদিও ক্যামেরায় সাক্ষাৎকার দিতে অসম্ভব অনীহা তাঁর। আলোর সামনে ১৫ মিনিটের বেশি বসতে পারবেন না, মাথা ধরে যায়, তাই কোথাও কোনও ভিডিয়ো সাক্ষাৎকার দেন না, লেখা সাক্ষাৎকার হলে আপত্তি নেই— ইত্যাকার হাজারো আপত্তি। রাজি হলেন অবশ্য শেষ পর্যন্ত। কিন্তু একাধিক ফোন এবং হোয়াট্সঅ্যাপ চালাচালির সময় মনে হচ্ছিল, কী যেন একটা নেই। আলুনি লাগছিল। মনে হচ্ছিল, যে লোকটার সঙ্গে কথা বলছি, তাকে আমি চিনি না। তিনিও আমায় চেনেন না। কথা বলার ভঙ্গিতে মনে হচ্ছিল, গত প্রায় ৩০ বছরের সম্পর্ক স্লেট থেকে মুছেই দিয়েছেন তিনি। নতুন স্লেটে নতুন চকখড়ি দিয়ে নতুন লেখা লিখছেন। নইলে সম্ভবত বলতেন না, ‘তোমার জন্য তো আর আলাদা করে সময় বার করতে পারব না! রাত সাড়ে ৯টায় যে কোনও দিন পার্টি অফিসে চলে এসো।’
ভোট নিয়ে ব্যস্ত জানি। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কোনও একটা দিন আর সময় বলা যাবে না?
‘না! যাবে না! আমার কাউকে আলাদা করে সময় দেওয়ার কিছু নাই। আমার অত সময়ও নাই। সকলেই তো আসছে। তুমি এলেও দেখা হয়ে যাবে।’
ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না। কোথাও একটা বেসুর বাজছিল। মনে হচ্ছিল, পুরনো সম্পর্কের তারটা কেটে গিয়েছে। সঙ্গে একটা সংশয়ও হচ্ছিল। একেবারে হারা-উদ্দেশ্যে কলকাতা থেকে লটবহর নিয়ে যাব? যদি কাটিয়ে দেন? কিন্তু একই কথা ভ্যাজর ভ্যাজর করে বার বার বলতে কাঁহাতক ভাল লাগে! কপাল ঠুকে রওনা হয়ে গেলাম। মাঝপথ থেকে আবার হোয়াট্সঅ্যাপ ছাড়লাম— ‘কলকাতা থেকে রওনা হলাম। তোমার নির্দেশমতো রাতেই পৌঁছচ্ছি পার্টি অফিসে। দেখা হবে তো?’
জবাব এল। সেটা পাল্টা প্রশ্ন, ‘কেন? ভরসা হচ্ছে না?’
আরে কী যে বলো! শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা। অধীর চৌধুরী ভরসা।
এ বারের জবাব আরও শ্লেষাত্মক, ‘ভোট হয়ে গেলে ভাই, জানা বলে টা টা-বাই বাই!’
আরে না-না! তা নয়। তবে এখন তো তুমি লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা। অনেক উঁচুতে। একটু দূরের তারা বলে মনে হয়। মনে হয়, সব সময় রেগে আছ।
এ বার কঠোর, ‘ফালতু কথা না বলাই ভাল!’
মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, কন্যার অকালমৃত্যুর অন্ধকার সন্ধ্যায় কি এই লোকটার সঙ্গেই ছিলাম? এই লোকটাই কি সেই হুল্লোড়ে, বন্ধুবৎসল, পরের বিপদে জানকবুল, লোকসভা সাংসদের গেরামভারী জোব্বা একটানে খুলে ফেলে হাফপ্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরে বানভাসি লোকেদের জন্য খিচুড়ি রাঁধতে নেমে-পড়া মাটির মানুষ? এই লোকটাই কি ‘মুর্শিদাবাদের রবিনহুড’? যে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে বিশ্বাসী। যে সমাজের একটা অংশের চোখে ‘গুন্ডা’, ‘দুষ্কৃতী’, ‘খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত’। আর অন্য একাংশের কাছে ‘ত্রাতা’।
এই লোকটাই কি একদা বহরমপুর আর মুর্শিদাবাদের রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছে? প্রদেশ কংগ্রেসের খোলাখুলি বিরোধিতা করে বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের দুটো কেন্দ্রে ‘হাত’ চিহ্নের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘কুঠার’ চিহ্নের নির্দল প্রাথী দাঁড় করিয়েছে। তার পরে রাজনীতি অথবা নীতির ক্যাঁতায় আগুন দিয়ে একই দিনে সকালে ‘হাত’ এবং বিকেলে ‘কুঠার’-এর হয়ে প্রচার করেছে। অর্থাৎ, সকালে ‘হাত’-এর হয়ে প্রচার করেছে আর বিকেলে ‘হাত’-এ বিরুদ্ধে! ভোটের ফলাফলে দেখা গিয়েছে, কী আশ্চর্য, ‘হাত’ আর ‘কুঠার’— দুই চিহ্নের প্রার্থীই জিতেছেন! অস্যার্থ— ‘হাত’ বা ‘কুঠার’ চুলোর দোরে যাক! জিতেছেন তিনি।
‘বান্টি অউর বাবলি’র বিখ্যাত মনোটোনের কথা মনে পড়ছিল— ‘ইয়ে যো ওয়ার্ল্ড হ্যায় না, ওয়ার্ল্ড? ইস মে দো তরহা কি লোগ রহতে হ্যায়।’ ঠিকই। এই পৃথিবীতে দু’ধরনের লোক থাকে। এক দল গণিতের লোক। এক দল রসায়নের। প্রথম দলটা আঁক কষে জীবন কাটায়। তাদের প্রতিটা পদক্ষেপে অঙ্ক থাকে। লাভ-ক্ষতির অঙ্ক। দ্বিতীয় দলের লোকেরা অঙ্ক-টঙ্ক কষে না। তারা মানুষে-মানুষে রসায়নের উপর নির্ভর করে। তাঁর নিন্দকেরা বরাবর তাঁকে প্রথম শ্রেণিতে ফেলে এসেছেন। বলেছেন, তিনি সব সময় অঙ্ক কষে চলেন। কোন অঙ্কে নিজের ভাল হবে। কিন্তু আমার তাঁকে বরাবর দ্বিতীয় শ্রেণির বলে মনে হয়েছে। নইলে তিনি ২৪ বছর আগে একটা মাত্র ফোনের অনুরোধে এক পুচ্ছপাকা, তত গুরুত্বপূর্ণ নয় কিন্তু পরিচিত রিপোর্টারের টিভি শোয়ের শুটিংয়ে বহরমপুর থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে হাজির হতেন না! অথবা তার বছর ছয়েক পরে (পরিচয় যখন আরও একটু গাঢ় হয়েছে) একই ভাবে এক ফোনে তার নতুন চাকরির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দিল্লি থেকে কলকাতায় চলে আসতেন না। কিংবা রাজনীতির নৈশ আড্ডায় তাকে সস্নেহে এবং মুর্শিদাবাদি টোনে বলতেন না, ‘‘সাংবাদিক হয়েও পান করো না? তুমি তো কঠিন লোক হে!’’
কিন্তু এই লোক সেই লোক নয়। এই লোক রসায়ন নয়, গণিতে বিশ্বাস করে। এই লোকের ভিতরে ভিতরে একটা ভাঙচুর চলছে। এই লোক নিজের সম্পর্কে অতটা নিশ্চিত নয়। এই লোকের স্নায়ু আর তার নিজের বশে নেই। এই লোক অস্থির। উচাটন। খরখরে। এই লোক খানিক ভঙ্গুরও বটে।
এটা ঠিকই যে, নানা বখেড়ায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়ে ওঠেনি। কারণ, ‘বিট রিপোর্টার’-এর ভূমিকা থেকে সরে আসতে হয়েছে ২০১২ সাল থেকে। গত ১২ বছরে ছুটকোছাটকা দেখা এবং কথা হয়েছে বটে। সেগুলো খুব মামুলি। কিন্তু আঠাটা শুকিয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়নি কখনও।
প্রায়ান্ধকার এবং মনুষ্যরহিত কংগ্রেস অফিসের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে এই সব হাবিজাবি ভাবছিলাম। তত ক্ষণে তিন তলার হলঘরে (প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বহরমপুর ক্যাম্প অফিসে সাংবাদিক বৈঠকের জন্য বরাদ্দ) আলো-ক্যামেরা সাজিয়ে কাজ-চালানো গোছের সেট বিছিয়ে ফেলেছে ভিডিয়ো টিমের সহকর্মী প্রিয়ঙ্কর (দে), বিশ্বরূপ (নাথ), সুমন (সাহা) এবং শুভদীপ (বসাক)। আলো মিহি রাখা হয়েছে। যদি অতিথির মাথা ধরে! নোটবই-কলম বাগিয়ে সাক্ষাৎকার রেকর্ড হতে হতেই টাটকা নোট নিতে তৈরি সহকর্মী শোভন (চক্রবর্তী)।
কিন্তু যাঁর জন্য অপেক্ষা, তিনি কই? অত রাতেও মে মাসের অসহ্য গরম গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। সিলিং ফ্যানের হাওয়া গনগনে ‘লু’-এর মতো লাগছে। গলগল করে ঘামছি। আর জুলজুল করে ঘরের বিভিন্ন প্রান্তে দাঁড় করানো গোটা তিনেক বাতানুকূল যন্ত্রের দিকে তাকাচ্ছি। শুধু তাকাচ্ছিই। কারণ, তাঁর ‘ম্যান ফ্রাইডে’ বলে দিয়েছেন, ‘দাদা’ না-বলা পর্যন্ত এসি চালানো বারণ। আগন্তুকেরা ঘেমেনেয়ে গলে পাঁক হয়ে গেলেও নয়। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম।
এত দিন মুখোমুখি হলে প্রথমেই একটা চেনা হাসি এবং আন্তরিক হাত মেলানো বরাদ্দ থাকত। এ বার এ দিক থেকে হাতটা বাড়ানোই রইল। ও দিক সেটা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে এবং একেবারেই চেনা না-দিয়ে সামান্য তফাতে দণ্ডায়মান বশংবদের দিকে একটা হাঁক মারল, ‘‘কী রে! এসি চালাসনি এখনও? চালা-চালা!’’ তার পরে হতভম্ব সাংবাদিকের দিকে এক বারও না-তাকিয়ে হলঘরের বাইরের করিডর ধরে কোথায় একটা অন্তর্হিত হয়ে গেল।
অধোবদন হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। জুনিয়র সহকর্মীদের সামনে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিল। কলকাতা থেকে যাওয়ার পথে তিরিশ বছরের সম্পর্ক, কত আড্ডা মেরেছি একসময়ে ইত্যাদি হ্যানা-ত্যানা বলে বাগাড়ম্বর করেছিলাম। সে সব গোল্লায় গেল। এ-ও বলেছিলাম যে, হি সিম্স টু বি অ্যাক্টিং আ বিট ডিফিকাল্ট! আশা করি, ইন্টারভিউটা হবে। হলও। কিন্তু তার নান্দীমুখ যে এই পর্যায়ে যেতে পারে, ভাবিনি। কিন্তু তাতে আর কী করা যাবে? এমনিতেই সাড়ে তিন দশক এই পেশায় থাকতে থাকতে গায়ের চামড়া মাপমতো মোটা হয়ে গিয়েছে। সব সময় মনে রাখি, আমি আসলে ফেকলু হয়ে টেবিলের উল্টো দিকে আছি। সুতোটা ধরা আছে উল্টো দিকের লোকটার হাতে।
সেই সুতো হাতে নিয়েই উল্টো দিকের কাঠের চেয়ারটায় এসে বসলেন তিনি। শুরু থেকেই উসখুস। কখনও পায়ের উপর পা তুলছেন, কখনও ঝপ করে সেই পা-টা নামিয়ে নিচ্ছেন, কখনও এক হাতের তেলোয় অন্য হাতে ঘুষি মারছেন, কখনও মোবাইল নিয়ে খুটখুট করছেন, প্রশ্ন করলে রেগে-রেগে জবাব দিচ্ছেন। যে জবাবের একটার ‘রিল’ পরদিনই ভাইরাল হয়ে গেল— ‘হেরে গেলে বাদাম বিক্রি করব!’
তবে চূড়ান্তটা তখনও বাকি ছিল। র্যাপিড ফায়ারে প্রশ্ন করলাম, কৌস্তুভ বাগচি না বাইরন বিশ্বাস? অসহিষ্ণু তিনি বললেন, ‘এ সব নাম বলে আমাকে ছোট কোরো না!’ বেশ। পরের সাবজেক্ট, নওশাদ সিদ্দিকি না নরেন চট্টোপাধ্যায়? প্রথমে একটা খেঁকুটে গলা এল, ‘কে?’ ক্যামেরা চলছে আর ভোম্বল হয়ে বসে বসে ভাবছি, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ বা ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রবীণ নেতা নরেনকে চেনেন না? সেই সময়ের ভগ্নাংশের অবসরে তিনি এক টানে শার্টের বোতামঘরের পাশে লাগানো ল্যাপেল মাইক্রোফোনটা খুলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন।
এর পরে আর সাক্ষাৎকার টেনে নিয়ে যাওয়ার অর্থ হয় না। ক্যামেরা অফ্ হওয়ার পরে ঔপচারিক ধন্যবাদ দিচ্ছি যখন, পাঁচ বারের বাঘা সাংসদের সম্ভবত খানিক মায়া হল। বললেন, ‘কোনও দরকার হলে বোলো।’ হেঁটমাথা আরও ঝুঁকিয়ে বললাম, নিশ্চয়ই। আমাদের সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। তিনি আবার দ্রুত পদক্ষেপে করিডরে বেরিয়ে কোথাও একটা সেঁধিয়ে গেলেন। শোভন-প্রিয়ঙ্করেরা হতভম্ব ভাব কাটিয়ে খানিক তৃপ্ত গলাতেই সম্ভবত বলল, ‘‘১৫ মিনিট সময় দেবেন বলেছিলেন। আধ ঘণ্টার বেশি হয়ে গিয়েছে কিন্তু।’’
সে সব মাথায় ঢুকছিল না। সেই ‘সন্নাটা’, সেই নৈঃশব্দ্যের মধ্যেও চারপাশে ঢেউ ভাঙছিল। স্মৃতির ঢেউ। মনে হচ্ছিল, বয়ে-যাওয়া ৩০ মিনিটে চোখের সামনে একটা প্রাসাদ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে দেখলাম। বহুশ্রুত উর্দু প্রবাদটা মনে পড়ছিল, ‘খণ্ডহর বতা রহে হ্যায় কি ইমারত ভি কভি বুলন্দ রহি হোগি!’ প্রাসাদ যে একদিন মজবুত ছিল, এই ধ্বংসস্তূপই তার সাক্ষী। মনে হচ্ছিল, কোনও তারকার বায়োগ্রাফির দ্বিতীয়ার্ধটা দেখা উচিত নয়। প্রথমার্ধটা ভাল। লড়াই-জয়-সাফল্য। তার পরেরটা পতনের। ক্রমাগত পড়তির। যে পতন চোখের সামনে দেখে এলাম। খানিকটা স্বগতোক্তির মতোই অস্ফুটে বেরিয়ে এল, ‘‘প্রশ্ন শুনে ল্যাপেল খুলে ফেলাটা এডিটে বাদ দিয়ে দিস প্লিজ়! ওটা অধীর চৌধুরীর পক্ষে খুব অসম্মানজনক দেখাবে।’’ তার পরে প্রায় একনিঃশ্বাসে, ‘‘অধীরদা হেরে যাবে!’’
বহরমপুরে তাঁর পরাজয় নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম। যেমন নিশ্চিত ছিলেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বও। কিন্তু তবুও আলপিনের মুখের মতো একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা মনে আসছিল। হাজার হোক, অধীর চৌধুরী তো! অল্প ভোটে হলেও ঠিক বার করে নেবেন। নইলে কি আর সাক্ষাৎকারে প্রতিপক্ষ হিসেবে ইউসুফ পাঠানের নামটা তুলতে না তুলতেই বলতেন, ‘‘ইজ়ি, ইজ়ি।’’
জুন মাসের ৪ তারিখে যখন তাঁকে ৮৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পেড়ে ফেললেন রাজনীতিতে আনকোরা, আনপড় এবং স্বভাববিনম্র সেই ‘ইজ়ি’, মনে হচ্ছিল, ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের জীবনটা যোগফলের। তার পর থেকে বিয়োগের। বন্ধুবিয়োগ, আত্মীয়বিয়োগ, প্রিয়জনবিয়োগ। তাঁর ক্ষেত্রে রাজনীতিবিয়োগেরও। মুর্শিদাবাদের নবাবের বিজয়লক্ষ্মী তাঁকে ছেড়ে গিয়েছেন। এআইসিসি-র সূতপুত্রের রথচক্র গ্রাস করে নিয়েছে তাঁরই ধাত্রীভূমির মেদিনী।
পুনশ্চ: ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’ সিরিজ়ে যে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, ভোটের ফল বেরোনোর পরে তাঁদের প্রায় সকলকেই ফোন করেছি। প্রায়। তাঁকেও করেছিলাম। দু’মিনিট কথা হল। তার মধ্যেই বার পাঁচেক বললেন, খুব আন্তরিক গলাতেই বললেন, ‘‘তোমার ফোন পেয়ে খুব খুশি হলাম।’’