রাজ্যের সব সরকারি চাকরিতে রূপান্তরকামীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করতে মুখ্য সচিবকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। প্রাথমিক শিক্ষক পদে মৃণাল বারিক নামে এক চাকরিপ্রার্থীর মামলায় সম্প্রতি বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এই নির্দেশ দিয়েছেন।
এর পাশাপাশি হাই কোর্টের বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে তাঁর নির্দেশ, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে অবিলম্বে মৃণালের ইন্টারভিউ এবং কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্যতা প্রমাণ হলে চাকরি দিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে চাকরি না পেয়ে মৃণাল হাই কোর্টে
মামলা করেছিলেন। আদালতে সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়, ইমতিয়াজ আখতার-সহ মৃণালের আইনজীবীরা জানান যে, তিনি রূপান্তরকামী। ২০১৪ এবং ২০২২ সালে প্রাথমিক টেট পাশ করা সত্ত্বেও ইন্টারভিউয়ে ডাক পাননি।
বিচারপতি মান্থা এ দিন রূপান্তরকামীদের সাংবিধানিক অধিকার প্রসঙ্গে ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়ের কথাও তুলে ধরেন। তাতে পিছিয়ে থাকা বা সুবিধা বঞ্চিত শ্রেণি হিসাবে রূপান্তরকামীদের জন্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একটি পরিসর তৈরির কথাও বলা হয়েছিল। বাস্তবে এ দেশের বিভিন্ন রাজ্য কর্নাটক, তামিলনাডু, কেরল, মহারাষ্ট্র থেকে বাংলার পড়শি রাজ্য ওড়িশাও রূপান্তরকামীদের জন্য সরকারি চাকরিতে এক শতাংশ সংরক্ষণ কার্যকর করেছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গের এ বিষয়ে তাপউত্তাপ নেই। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, এর আগে রূপান্তরকামীদের চাকরির ক্ষেত্রে সমানাধিকার নিয়ে রাজ্যের নারী এবং শিশুকল্যাণ দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। সেই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে রাজ্যের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি বৈঠকও হয়েছিল। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কমিটিতেও এক জন রূপান্তরকামী সদস্য আছেন। কিন্তু রূপান্তরকামীদের অস্তিত্বটুকু খাতায়-কলমে স্বীকার করা ছাড়া তাঁদের জন্য কাজের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক পরিসর তৈরি করতে রাজ্য এক কদমও এগোয়নি বলে সমাজকর্মীদের অনেকেরই আক্ষেপ।
রূপান্তরকামীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে সরব একটি মঞ্চের তরফে রূপান্তরকামী নারী দেবাংশী বিশ্বাসও বলছেন, “রূপান্তরকামীদের জন্য রাজ্যে কোনও নীতির বাস্তবায়ন না হওয়াটা অদ্ভুত। নালসা রায়ের পরে পশ্চিমবঙ্গেই দেশে সবার আগে ট্রান্সজেন্ডার ডেভলপমেন্ট বোর্ড গড়া হয়েছিল। কিন্তু রূপান্তরকামীদের জন্য উদ্যোগ এখানে কার্যত নেই। সরকারি চাকরির সুবিধা দূরে থাক, রূপান্তরকামী পরিচয়ে সরকারি নথি বের করতেও আমাদের নিত্য হেনস্থার শিকার হতে হয়। হাই কোর্টকে ধন্যবাদ, উচিত কথাটা বলার জন্য। আশা করব রাজ্য সরকার এ বার একটু সজাগ হবে।”