দুপুর দেড়টা। ফের অচেনা নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কল। খানিক ইতস্তত করেও তা ধরেছিলেন, ব্যারাকপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডল। শনিবার তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করেই আট রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল দুই দুষ্কৃতী।
রবিবার দুপুরে ওই ব্যবসায়ীকে ফের ফোন করে ‘ঠান্ডা গলায়’ হুঁশিয়ারি দেওয়ার অভিযোগ উঠল বিহারের জেলে বন্দি কুখ্যাত দুষ্কৃতী সুবোধ সিংহের বিরুদ্ধে। এ দিন নিজের বাড়িতে বসে সেই ফোনের কথোপকথনের (পুরোটাই হিন্দিতে) বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখে-মুখে আতঙ্ক ফুটে উঠছিল ষাটোর্ধ্ব অজয়ের।
ওই ব্যবসায়ীর দাবি, সুবোধ তাঁকে বলে, ‘মারার জন্য পাঠাইনি। ভয় দেখানোর জন্য পাঠিয়েছিলাম।’ তাতে অজয় বলেন, ‘ভয় দেখানোর জন্য আট রাউন্ড গুলি চালানোর কী দরকার ছিল?’ ব্যবসায়ীর দাবি, উত্তরে সুবোধ তাঁকে বলে, ‘মারার হলে তোমার শোরুমে ঢুকে ৫০ রাউন্ড গুলি চালাতাম।’ তাতে অজয় বলেন, ‘আমার ষাটের উপরে বয়স। একটা গুলি মারলেই তো মরে যাব।’ প্রত্যুত্তরে সুবোধ জানায়, ‘কোনও চিন্তা কোরো না। ভয়ের কিছু নেই। কেউ ফোন করলে আমাকে বলবে। আমি লোক পাঠিয়ে দেব, কথা বলে নিও। কোনও সমস্যা হবে না। আর কোথাও দৌড়িয়ে লাভ হবে না।’
শনিবার গুলি চালানোর ঘটনার পরে বেলঘরিয়া থানায় বসে যখন পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে অজয় কথা বলছিলেন, তখনও সুবোধ ফোন করেছিল বলে অভিযোগ। তার পরে ফের এ দিনের ফোনে রীতিমতো আতঙ্কিত ওই ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘সুবোধ দাবি করছে, আগে প্রায় ২০ বার আমাকে ফোন করেছে। কিন্তু অচেনা নম্বর দেখে ধরিনি বলে জানিয়েছি।’’ যদিও ঘটনার পর থেকে পর পর দু’দিনের ফোন সুবোধই করেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যারাকপুরের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া।
তবে অজয়ের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনায় টিটাগড়ের দুষ্কৃতী শাহাজাদা ও তার মাথার উপরে সুবোধ রয়েছে বলেই সূত্রের খবর। তদন্তে এ-ও জানা গিয়েছে, ২০০৪-’০৫ সাল থেকে শাহাজাদা ‘তোলা’ নেয় অজয়ের থেকে। দিন দিন ওই দুষ্কৃতীর চাহিদা বাড়ছিল। সুবোধ ও শাহাজাদা একই দলের, না কি আলাদা, সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলতে চাইছেন না তদন্তকারীরা।
যে বাইকে চেপে শনিবার দুই দুষ্কৃতী এসেছিল, এ দিন বেলঘরিয়া স্টেশনের পাশ থেকে সেটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। মিলেছে দু’টি হেলমেটও। তা হলে কি ঘটনার পরে বাইক ফেলে ট্রেনে চেপে চম্পট দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা? তারই উত্তর আপাতত খুঁজছে পুলিশ।
এখানেই উঠে এসেছে বেশ কিছু প্রশ্ন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়া নম্বর প্লেট-সহ বাইকটি বেলঘরিয়া এলাকাতেই রেখে কেন চলে গেল দুষ্কৃতীরা? বার বার করে ভয় দেখাতে হামলা চালানোর কথা কেন ফোন করে বলছে দুষ্কৃতী? অজয় বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, ওরা আমার উপরে হামলা চালিয়ে অন্য নির্মাণ ব্যবসায়ীদেরও বার্তা দিল। যাতে আতঙ্কে কেউ ওদের দাবির বিরোধিতা না করেন, ওদের সমঝে চলেন।’’ অন্য দিকে, গুলি চালানোর ঘটনায় তিন জনকে পুলিশ আটক করেছে বলে সূত্রের খবর। যদিও সেটি স্বীকার করেনি পুলিশ।
এ দিন তালবাগানের বাড়িতে বসে অজয় বলেন, ‘‘ব্যারাকপুর, খড়দহ, এমনকি ঝাড়খণ্ডেও কাজ করেছি। কিন্তু, কেউ কিছু দাবি করেনি। এখন ডোমজুড়ে কাজ করছি। সেখানেও এ সব নেই।’’ অজয় আরও দাবি করেন, এক সময়ে তিনি টিটাগড় এলাকায় একচেটিয়া নির্মাণকাজ করেছেন। আর প্রতিটি প্রকল্পের লভ্যাংশ হিসেব কষে তার দশ শতাংশ দাবি করত শাহাজাদা। সেই টাকা দিতেও হত।
তবে ২০০৮ নাগাদ ওই দুষ্কৃতীর দাবি ক্রমশ বাড়তে থাকায় পুলিশকেও বিষয়টি জানিয়েছিলেন বলে দাবি অজয়ের। কিন্তু তাতে কোনও সুরাহা হয়নি। অজয় বলেন, ‘‘টিটাগড়ে কে, কোথায়, কী কাজ করছে, সব শাহাজাদা জানে। এমনকি, নতুন বাড়ি বা দোকান কিনলেও ওকে টাকা দিতে হয়।’’ এখন টিটাগড়েও তিনটি প্রোমোটিং করছে ওই দুষ্কৃতী। বছরখানেক ধরে টিটাগড় ছেড়ে কলকাতায় থেকে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে সে। শনিবারের ঘটনার পর থেকে অবশ্য শাহাজাদার টিটাগড়ের তিনটি বাড়ি তালাবন্ধ বলে জানিয়েছে পুলিশ।