• সাতটা বছর কেটে গিয়েছে, কথা দিয়েও কথা রাখেনি রেল! প্রতিশ্রুতি মানলে এড়ানো যেত কি দুর্ঘটনা?
    আনন্দবাজার | ১৭ জুন ২০২৪
  • কথা দিয়েছিল রেল। বলা হয়েছিল, দুর্ঘটনা কমাতে পুরনো প্রযুক্তির কামরা সরিয়ে দেওয়া হবে দেশের সমস্ত ট্রেন থেকে। থাকবে শুধুই উন্নত প্রযুক্তির কামরা। কিন্তু সাত বছর কেটে গেলেও রেল কথা রাখেনি। সোমবার উত্তরবঙ্গে যে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছে, তার সব ক’টি কামরাই ছিল পুরনো প্রযুক্তির ‘আইসিএফ কোচ’। রেলেরই এক প্রাক্তন কর্তার দাবি, রেল কথা রাখলে হয়তো দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হত না কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে।

    ২০১৭ সালেই রেল দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল করেছিল রেল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ট্রেনের কামরা বদল করা। রেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, পুরনো প্রযুক্তির কামরা তৈরি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ওই ধরনের বগি তৈরি হত চেন্নাইয়ের ‘ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি’তে। ফ্যাক্টরির নামেই বগির নাম— আইসিএফ। রেল বোর্ড ২০১৭ সালে জানিয়ে দেয়, এখন থেকে দেশের সব ট্রেনেই ধীরে ধীরে পুরনো আইসিএফ কামরা পাল্টে এলএইচবি (লিঙ্ক হফম্যান বুশ) প্রযুক্তির উন্নত কামরা লাগানো হবে।

    এলএইচবি হল জার্মানির লিঙ্ক হফম্যান বুশ প্রযুক্তিতে তৈরি কামরা। এই ধরনের কামরার ভারসাম্য অনেক বেশি। হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গতি বৃদ্ধির ক্ষমতা রাখে। তবে গতি বাড়লেও ভারসাম্য নষ্ট হয় না। এক্সপ্রেস বা উচ্চ গতি সম্পন্ন ট্রেনের ক্ষেত্রে তাই এই ধরনের কামরাই উপযুক্ত। দুর্ঘটনা এড়ানোর ক্ষেত্রেও।

    রেলের এক প্রাক্তন কর্তা জানাচ্ছেন, এলএইচবি কামরার বিশেষত্ব হল, ‘‘সামনাসামনি দুই ট্রেনের ধাক্কা লাগলে একটি কামরা আর একটি কামরায় ঢুকে যাবে না। এমনকি, একটি কামরা আর একটির উপরে উঠেও যাবে না। ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে গেলে কামরাগুলি যেমন তেমন ভাবে উল্টেপাল্টে যাবে না। কাঞ্চনজঙ্ঘায় যেমনটা হল, এটা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য হত ওই কোচ থাকলে।’’

    ২০১৭ সালে রেল হয়তো তাই জানিয়েছিল, দেশের সমস্ত ট্রেনে ওই কামরা লাগানো হবে। জোগানে যাতে অসুবিধা না হয় তাই, চেন্নাইয়ের ‘ইন্ট্রিগ্রাল কোচ ফ্যাকট্রি’তে শুধু এলএইচবি কামরা তৈরি করার কথাও বলেছিল রেল মন্ত্রক। কিন্তু সাত বছর পরেও দেখা যাচ্ছে দেশের সমস্ত ট্রেন এলএইচবি কামরা পায়নি। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস তার সর্বশেষ উদাহরণ।

    একটা সময়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা চলত শিয়ালদহ-নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে। সেই ট্রেন পরে ত্রিপুরার আগরতলা এবং রবিবার থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে সাব্রুম পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ অন্তত ১,৫৫৯ কিলোমিটার পথ প্রায় ৩৬-৩৭ ঘণ্টায় অতিক্রম করছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। অথচ ট্রেনটি এখনও চলছে আইএসএফ কোচ নিয়ে। রেলের এক প্রাক্তন কর্তার কথায়, ‘‘উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলে স্বল্প দূরত্বের ট্রেনেও যেখানে অত্যাধুনিক এলএইচবি কোচ দেওয়া হচ্ছে সেখানে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের জন্য পুরোনো কোচ বরাদ্দ কেন?’’

    এ প্রশ্নের অবশ্য একটি সম্ভাব্য জবাবও মিলেছে। মনে করা হচ্ছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের মতো বেশ কিছু ট্রেন একটি নির্দিষ্ট স্টেশন থেকে কিছু কামরা ছেড়ে রেখে এগিয়ে যায়। বাকি কামরাগুলিকে অন্য ইঞ্জিনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় অন্য রুটে যাওয়ার জন্য। এই ধরনের ট্রেনে আইসিএফ কোচ থাকলে কামরাগুলির কাপলিং খোলা বা জোড়ার সুবিধা হয়। সময়ও লাগে কম। অন্য দিকে, এলএইচবি বগি থাকলে কাপলিং সহজে খোলা বা জোড়া যায় না। একটু সময় বেশি লাগে। আর সে জন্যই সাধারণত এই ধরনের ট্রেন গুলিতে এলএইচবি কোচ দেওয়া হয়নি এখনও।

    কিন্তু একই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠছে যে সময় বাঁচাতে কি যাত্রীদের নিরাপত্তার সঙ্গে আপোস করা যায়?
  • Link to this news (আনন্দবাজার)