ইদের নমাজ সবে শেষ হয়েছে। মসজিদ থেকে কেউ কেউ তখনও বাড়ি ফেরেননি। কেউ বা বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে আনন্দে মেতেছিলেন। এমন সময় বিকট শব্দে চমক! কোথাও কি কিছু ঘটে গেল? আশঙ্কা করতে করতে কেউ মসজিদ, কেউ বাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখতে পেলেন ভয়-ধরানো দৃশ্য। দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে ধাক্কা দিয়েছে মালগাড়ি। এক লহমায় বুঝতে পারলেন ওঁরা, কী ঘটে গিয়েছে। সব কিছু ফেলে দৌড়লেন সে দিকে।
বাড়িতে পড়ে রইল নতুন পোশাক, উৎসবের আয়োজন। সব ফেলে যেন তখন তাঁদের একটাই লক্ষ্য, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেন থেকে যাত্রীদের বার করে আনতে হবে। দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দিতে হবে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাণপণে লড়লেন। উদ্ধার করে জখম যাত্রীদের সাধ্য মতো পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন হাসপাতালে। জখম কাউকে কাউকে শুশ্রূষার জন্যে নিয়ে গেলেন নিজেদের বাড়িতেই। দিনশেষে মাটিমাখা অবস্থায় সকলে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। মহম্মদ আজিবুল, মহম্মদ রাহুল, শাহিদ আলম, মহম্মদ রাজু, নাজির হুসেনের মতো অনেকেই। শিলিগুড়ি মহকুমার রাঙাপানি এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনার পরে এমন ছবি দেখা গেল ছোট নির্মল জোতে।
বিডিও বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, ‘‘পাড়াসুদ্ধ হাত লাগিয়েছেন উদ্ধার কাজে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁদের সাধুবাদ জানিয়েছেন, পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’’ স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পরে পুরো গ্রামেই ইদের সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। কোনও বাড়িতেই এ দিন উনুন জ্বলেনি। প্রত্যেকের কথা, “এ বছর ইদের আনন্দ না-ই করলাম। কিন্তু অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পেরেছি। আগে মানুষ, তার পরে উৎসবের আনন্দ।” এ দিন ছোট নির্মলজোতের মসজিদের ইমাম মহম্মদ বসিরউদ্দিন সকলকে আবেদন করেন উদ্ধারকাজ শুরু করার। মহিলারাও উদ্ধারকারীদের জন্য জল, চা নিয়ে যান।
ইমাম মহম্মদ বসিরউদ্দিন বলেন, “কোনও বাড়িতে রান্না হয়নি। সোমবার কুরবানি ইদ ছিল। কোনও বাড়িতে কুরবানি হয়নি। যুবক, মহিলা সকলে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন। জখম যাত্রীদের কোলে নিয়ে মেডিক্যালে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন গ্রামবাসীরা। পরে উদ্ধারকারী দল পৌঁছায়।” নির্মল জোতের বাসিন্দা আজিবুল বলেন, ‘‘মানুষের হাহাকার, দেহাংশ রেললাইনে পড়ে থাকতে দেখে কেঁদে ফেলেছিলাম। চুপ থাকতে পারিনি।’’
এ দিন সন্ধ্যায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে উদ্ধারকারী বেশ কয়েকজন যুবকদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের হাতে কিছু উপহার তুলে দেন। মহম্মদ রাহুল নামে এক যুবক বলেন, “নমাজ পড়ে বের হতেই বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে সকলে দৌড়ে যাই ঘটনাস্থলে। আগামী বছর ইদে আনন্দ করব। আমরা কয়েকজন কলেজে পড়াশোনা করছি। মুখ্যমন্ত্রী চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন জানিয়েছেন।” তবে উদ্ধারকাজের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত বলে দাবি করছেন তাঁরা।