জুন মালিয়াকে তিনি সংবর্ধিত করছেন— এমন একটি মুহূর্তের ছবি রবিবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন সুজয় হাজরা। ছবির উপরে ক্যাপশনে সুজয় লিখেছেন, ‘আওয়ার এমপি’। অর্থাৎ, ‘আমাদের সাংসদ’। ক্যাপশনের পাশে দিয়েছেন সবুজ ‘লাভ সাইন’ও। সুজয় কি তবে মেদিনীপুর বিধানসভার টিকিট প্রত্যাশী, তাই কি তিনি জুনের সঙ্গে ‘সমঝোতার রাস্তা’ খোলা রাখতে চাইছেন— শুরু হয়েছে জল্পনা! সুজয়ের এই পোস্ট দেখে বিস্মিত তৃণমূলের একাংশ নেতা-কর্মীও! মেদিনীপুরের এক তৃণমূল নেতার মন্তব্য, ‘‘কী আর বলব! দলের সকলে সব দেখছেন।’’
জুন মেদিনীপুরের বিধায়ক ছিলেন। লোকসভা ভোটে জিতে মেদিনীপুরের সাংসদ হয়েছেন। সুজয় দলের জেলা সভাপতি। জুনের সঙ্গে সুজয়ের সম্পর্ক ‘শীতল’ বলে গুঞ্জন। দু’জনের ‘বিরোধে’র কথা অজানা নয় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের। গত বছর মে মাসে শালবনিতে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় অধিবেশনে। সেখানে সুজয়ের উদ্দেশে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘সুজয়, তুমি জুনের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে। জুন আমাদের সাংস্কৃতিক মঞ্চের একটি মেয়ে। আর যদি না করো, আমাকে বাধ্য করো না ব্যবস্থা নিতে।’’ এ বছর মার্চে মেদিনীপুরে এসেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। দলীয় বৈঠকে সুজয়কে মমতার নির্দেশ ছিল, ‘‘তুমি জুনের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে।’’
লোকসভায় জুনকে মেদিনীপুরের প্রার্থী করেছিলেন মমতা। জুন জিতেছেন। গত শনিবার মেদিনীপুরে দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, বৈঠকে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে মেদিনীপুর লোকসভার নব-নির্বাচিত সাংসদ জুনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে সংবর্ধিত করেছেন সুজয়ও। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ছবিই রবিবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন সুজয়। যা ঘিরে জল্পনা দেখা দিয়েছে। তবে কি দু’জনের ‘দূরত্ব’ মুছল— এমন প্রশ্নই ডানা মেলছে। শনিবার রাতে ‘গেট টুগেদার’-এর ধাঁচে এক আড্ডার আয়োজন করেছিলেন জুন। মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে। ডাক পেয়ে সেখানে গিয়েছিলেন সুজয়ও।
জুনের সঙ্গে সুজয়ের সম্পর্ক শীতল বলে গুঞ্জন। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান সৌমেন খানের সঙ্গে ‘বিরোধ’ রয়েছে তৃণমূলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবের। সৌমেন জুনের অনুগামী। বিশ্বনাথের পরিচিতি সুজয়ের অনুগামী হিসেবে। জুনকে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মেদিনীপুরের প্রার্থী করেছিলেন মমতা। এ বারে লোকসভার প্রস্তুতিতে দলের নির্বাচনী কমিটি হয়েছিল মেদিনীপুর শহরেও। শহরে তৃণমূলের সভাপতি পদে রয়েছেন বিশ্বনাথ। বিশ্বনাথ পুর-প্রতিনিধিও। কমিটির মাথায় অবশ্য তাঁকে রাখা হয়নি। কমিটির মাথায় রাখা হয়েছিল সৌরভ বসুকে। দলে জল্পনা, জুন চেয়েছিলেন বলেই সৌরভ ওই পদে বসেছিলেন।
মেদিনীপুর বিধানসভায় উপ-নির্বাচন আসন্ন। কারণ, জুন মেদিনীপুরের বিধায়ক ছিলেন। লোকসভা ভোটে জিতে মেদিনীপুরের সাংসদ হয়েছেন তিনি। সব ঠিক থাকলে আগামী ছ’মাসের মধ্যে এখানে উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা। এখানে উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী কে হবেন, সে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে! খবর, উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতার সংখ্যা খুব কম নয়। এর মধ্যে রয়েছে সুজয়ের নামও। মেদিনীপুরের এক তৃণমূল নেতা মানছেন, ‘‘ইচ্ছে অনেকের থাকতেই পারে। যোগ্যতম প্রার্থী কে হতে পারেন, সেটা স্থির করবে দলই।’’