রাজ্যের নানা প্রান্তে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগে সরব বিজেপি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দলীয় নেতৃত্ব জেলায় জেলায় যাচ্ছেন। কোথাও পৌঁছচ্ছে বিজেপির কেন্দ্রীয়। ঘুরছেন প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষও।
বিজেপির কেন্দ্রীয় প্ৰতিনিধিদল কোচবিহারে পৌঁছনোর পরে সন্ত্রাসের অভিযোগ আরও তীব্র হয়। সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ চার সদস্যের দলটি কোচবিহারে পৌঁছয়। দলে ছিলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব দেব, সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন ডিজি তথা রাজ্যসভার সাংসদ ব্রিজলাল এবং সাংসদ কবিতা পতিদার। বিপ্লবের অভিযোগ, জেলায় বিজেপি কর্মী এক মহিলাকে ধর্ষণ করেছে তৃণমূলের লোক। তিনি নার্সিংহোমে ভর্তি। সেই অভিযোগ পুলিশ নিতে চায়নি বলেও দাবি। পরে অনলাইনে অভিযোগ জানানো হয়। দলীয় কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর, মহিলাদের উপরে অত্যাচার ও দলের কর্মীদের জরিমানা করা হচ্ছে বলেও বিপ্লবরা দাবি করেন।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি উদয়ন গুহের পাল্টা দাবি, ‘‘এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। আর পুলিশ তো আমাদের নামে অনেক মামলা নিয়েছে। এই মামলা না নেওয়ার কোনও কারণ থাকতে পারে না।’’ এ দিন, কোচবিহার জেলা বিজেপি কার্যালয়ে ‘আক্রান্ত’ কর্মীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় প্ৰতিনিধিদের বৈঠকের সময় এক সিভিক ভলান্টিয়ার সেখানে ঢুকে ভিডিয়ো করায় গোলমাল বাধে। তাঁকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে বার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল তাঁর মোবাইল ফোনও কেড়ে নেন বলে দাবি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সিভিককে এমন কোনও দায়িত্ব দেওয়া ছিল না। অতি উৎসাহেই তিনি বৈঠকে ছিলেন।
ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগে উত্তাপ বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। কেশপুর, গড়বেতা, দাঁতন, নারায়ণগড় প্রভৃতি এলাকার শতাধিক বিজেপি নেতা-কর্মী ঘরছাড়া বলে অভিযোগ। এঁদের কেউ আশ্রয় নিয়েছেন দলীয় কার্যালয়ে, কেউ বা পরিচিতের বাড়িতে। মেদিনীপুরে জেলা বিজেপি কার্যালয়েও বেশ ক’জন ‘ঘরছাড়া’ রয়েছেন। জেলার পরিস্থিতির খোঁজ নিতে সোমবার মেদিনীপুরে এসেছিলেন প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ। ঘরছাড়াদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া বা দলীয় কার্যালয়ে বক্তৃতা— এর কোনওটিই করেননি দিলীপ।
কেশপুরের ঘরছাড়া রবিন কোলে, জিতেন রাণা, পলাশ হাজারিরা রবিবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে গিয়েছিলেন। জিতেন দলের মণ্ডল সহ-সভাপতি। ফলপ্রকাশের দিন থেকেই ঘরছাড়া। তাঁর নালিশ, ‘‘তৃণমূলের লোকেরা ঘরে হামলা চালিয়েছে। বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়েছি।’’ কেশপুরের বিজেপি নেতা তন্ময় ঘোষের দাবি, ‘‘কেশপুরে প্রায় একশো জন ঘরছাড়া রয়েছে।’’ তবে কেশপুরের তৃণমূল নেতা মহম্মদ রফিক বলছেন, ‘‘বিজেপির কেউ কেউ নিজে থেকেই ঘর ছেড়েছেন। এখন নাটক করছেন।’’
রবিবার রাতে দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের বিজেপি কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন দিলীপ ঘোষ। বৈঠক শেষে নেতারা বেরিয়ে যাওয়ার খানিক পরেই ওই কার্যালয়ে হামলা হয় বলে অভিযোগ। জনা তিনেক কর্মী মারধরে জখম হন। ভাঙচুর করা হয় দু’টি মোটরবাইকও। দিলীপের দাবি, “পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসা নতুন কিছু নয়। স্থানীয় দুষ্কৃতীরা এই হামলা করছে।” তৃণমূল অবশ্য এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ স্বীকার করেনি।