সকালে স্ত্রীর সঙ্গে কথা, ফেরা হল না পছন্দের সেই ট্রেনেই
আনন্দবাজার | ১৮ জুন ২০২৪
পছন্দের ট্রেন মানেই ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস।
কেউ উত্তরবঙ্গ বেড়াতে যাবেন শুনলে তাঁকে পরামর্শ দিতেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ভ্রমণ করার জন্য। অফিসের কাজ সেরে সেই পছন্দের ট্রেনেই বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু যাত্রা শেষ হল না। উত্তরবঙ্গের রাঙাপানিতে সেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পার্সেল ভ্যান ছিটকে গেল মালগাড়ির ধাক্কায়। তাতেই মৃত্যু হল রেলওয়ে মেল সার্ভিসের কর্মী শঙ্করমোহন দাসের।
রাঙাপানির কাছে এ দিন সকালে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। সেটি যখন দাঁড়িয়েছিল, তখন একটি মালগাড়ি পিছন থেকে এসে ওই ট্রেনের পার্সেল ভ্যানে ধাক্কা মারে। সেই কামরাতেই ছিলেন ৬২ বছরের শঙ্কর ও তাঁর সহকর্মীরা। দুর্ঘটনায় বাকিরা বেঁচে গেলেও বাড়ি ফিরতে পারলেন না ফুলবাগানের শিবকৃষ্ণ দাঁ লেনের বাসিন্দা শঙ্কর।
ঘটনার আকস্মিকতায় স্তম্ভিত ক্যানাল সার্কুলার রোডের বাসিন্দারা। শনিবার রাতেও পাড়ার ফুটবল প্রতিযোগিতায় শঙ্করকে দেখেছেন তাঁর পরিচিতেরা। রবিবার ভোরে পছন্দের ট্রেনে চেপেই পেশাগত কাজে নিউ জলপাইগুড়ি গিয়েছিলেন ওই প্রৌঢ়। এ দিন ফিরতি ট্রেনে ওঠার পরে সকালে স্ত্রী স্বপ্নার সঙ্গে ফোনে কথাও হয় তাঁর। তার কিছু ক্ষণ পরেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস।
এ দিন ক্যানাল সার্কুলার রোডে শঙ্করের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, একটি ঘরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী স্বপ্না। অন্য ঘরে বসে শূন্য দৃষ্টিতে জানলার দিকে তাকিয়ে আছেন শঙ্করের বৃদ্ধা মা। পরিজনেরা জানান, আগামী বছর পরিবারের ছোট ছেলে শুভমের বিয়ে। তার প্রস্তুতি চলছিল।
রেলওয়ে মেল সার্ভিসের কর্মী শঙ্কর অবসর নেওয়ার পরেও কাজ করছিলেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই তাঁকে নিউ জলপাইগুড়ি যেতে হত। এ দিন দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যুর খবর জানতে পেরেই উত্তরবঙ্গ ছুটেছেন শঙ্করের বড় ছেলে শুভঙ্কর। পরিজনেরা জানান, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শঙ্করের বাড়িতে ফোন করে দেহ শনাক্ত করতে আসতে বলা হয়। তখনই তাঁর মৃত্যুর খবর জানতে পারেন স্বপ্না।
এ দিন দুপুরে স্বপ্না কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘সকালেও মানুষটার সঙ্গে কথা হল। বলল, ট্রেনে উঠে গিয়েছে। তার পরেই দেখলাম এত বড় দুর্ঘটনা। কী ভাবে সিগন্যাল ভাঙল মালগাড়ি? আমার তো সব শেষ হয়ে গেল।’’
শঙ্করের ভাই পার্থ জানান, এ দিন সকালে গ্যাংটকের বাসিন্দা তাঁদের এক আত্মীয় কলকাতায় ফোন করে খবর দেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ধাক্কা মেরেছে মালগাড়ি। তার পর থেকে শঙ্কর ফোন ধরছেন না। পার্থের কথায়, ‘‘ভয়ে তখন হাত-পা কাঁপছে। কখনও ফোনে সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছিল না। কখনও ফোন বেজে যাচ্ছিল। কিন্তু দাদা ফোন ধরছিলেন না। ওই আত্মীয় গ্যাংটক থেকে রাঙাপানিতে পৌঁছে যান। প্রথমে দাদাকে দেখতে পাননি তিনি। তার পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে আমরা খোঁজ নিয়ে দাদার কথা জানতে পারি। হাসপাতাল থেকে দেহ শনাক্ত করতে আসতে বলা হয়।’’
হৃদ্যন্ত্রের সমস্যার কারণে শঙ্করের বুকে স্টেন্ট বসানো ছিল। পরিজনেরা মনে করছেন, তা-ই হয়তো দুর্ঘটনার আকস্মিকতা তাঁর হদ্যন্ত্রকে প্রভাবিত করেছিল। পার্থের কথায়, ‘‘দাদার সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা মোটামুটি সুস্থ আছেন। হয়তো দুর্ঘটনার আকস্মিকতায় দাদা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন।’’