নারায়ণ সিংহরায়: কী কারনে এই দুর্ঘটনা। সিগন্যাল বিভ্রাট? নাকি অন্য কিছু? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে তৈরি হয়েছে কমিটি। শুরু হয়েছে তদন্ত। প্রাথমিক ভাবে সেই কমিটি জানিয়েছেও কিছু-কিছু তথ্য। দায় কার? দোষ কার? গাফিলতি কার?
এই সব প্রশ্নে কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার সকালেই বলেছিলেন, 'কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটি'র আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছেন। তাঁরা প্রথমিকভাবে কাজও শুরু করেছেন। যাঁরা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বা সেই সময়ে কর্মরত ছিলেন তাঁদের সঙ্গে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা। তাঁদের বয়ান রেকর্ড করা হবে। দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ অনুসন্ধান করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে অনেক অসংগতি ধরা পড়েছে। 'সিগন্যাল ফেলিওর', 'কর্মচারীদের অসাবধানতা'-সহ কিছু কিছু বিষয় উঠে আসছে। তবে এ বিষয় নিয়ে শেষ কথা 'কমিশন ওফ রেলওয়ে সেফটি'ই বলবে!ওদিকে 'কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি অফিসার' জনক কুমার গর্গ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে, সোমবার ডিআরএম অফিসে একটি বৈঠকও রয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া না পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না দায় কার।তদন্ত শেষ হয়নি কিন্তু, প্রাথমিক ভাবে মালগাড়ির চালক এবং সহকারী চালকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ হল রেলের তরফে। আর তাতেই প্রশ্ন উঠছে যে, তদন্ত-প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই কী ভাবে দুই মৃত ব্যক্তির উপর দায় চাপায় রেল? প্রসঙ্গত, সোমবার ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মালগাড়ির চালকের।
জানা গিয়েছে, এক যাত্রীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে মালগাড়ির চালক ও সহ-চালকের নামে এই অভিযোগ দায়ের করে রেল। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের যাত্রী চৈতালি মণ্ডলের এনজেপি, জি আরপি-তে তার অভিযোগের ভিত্তিতে শিলিগুড়ি জিআরপি-তে এই অভিযোগ দায়ের হল মালগড়ির চালক এবং সহকারী চালকের বিরুদ্ধে। তাঁদের বিরুদ্ধে রাশ ড্রাইভিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইপিসি ২৮৯, ৩৩৭, ৩৩৮, ৪২৭ ও ৩০৪ ধারায় মামলা শুরু করা হয়েছে।
এদিকে, প্রায় চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভবিক করে তুলেছে নর্থ-ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চালিয়ে আপ লাইনকে গত কালই চলাচলের যোগ্য করে তুলেছিল। সন্ধ্যের পর সেই লাইন দিয়ে ইঞ্জিন চালিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। রেলের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আপ লাইন স্বাভাবিক করে তোলা হয়েছে। তবে গতকাল কোনও যাত্রীবাহী বা মালবাহী ট্রেনচলাচল হয়নি ওই রুটে। ইঞ্জিন ও কামরা সরিয়ে ডাউন লাইনকেও চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। তবে সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। রেলের আধিকারিকদের কথায়, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আপ এবং ডাউন লাইনে আগের মতোই গাড়ি চলাচল শুরু হবে। অনেকটা এলাকা জুড়ে ওভারহেডের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় তা মেরামতির কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই সকালে আপ লাইনে খুব ধীর গতিতে কামাখ্যা-গান্ধীধাম এক্সপ্রেসকে পার করানো হয়। গতকালের পর এটিই প্রথম ট্রেন, যা দুর্ঘটনাস্থল পেরোল।