• ডায়মন্ড হারবার লোকসভার আমতলায় বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের ঘিরে বিজেপির ঘর ছাড়া কর্মীদের বিক্ষোভ, অভিভাবকহীন বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্ধ প্রকাশ্যে
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৯ জুন ২০২৪
  • নিজস্ব সংবাদদাতা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, ১৮ জুন: ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার ঘর ছাড়া বিজেপির কর্মীদের ডায়মন্ড হারবার লোকসভার সাতগাছিয়া বিধানসভা এলাকার বিষ্ণুপুর আমতলা অঞ্চলে দেখতে এসে, বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়লেন মঙ্গলবার দুপুরে। ডায়মন্ড হারবার লোকসভার পরাজিত প্রার্থী অভিজিৎ দাস বনাম জেলা সভাপতি অভিজিৎ সর্দারের অনুগামীদের মধ্যে যে তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্ধ সামনে এল। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিজেপির দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জনৈক কর্মীর কথায়, মঙ্গলবার সকাল দশটা নাগাদ আমতলা নিবারণ দত্ত রোডের সিংহির মোড়ে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে আসেন বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ঘর ছাড়া কর্মীদের দেখতে, জেলা বিজেপির কার্য কর্তাদের সাথে কথা বলতে। দলে ছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব, রবিশঙ্কর প্রসাদ বঙ্গের অগ্নিমিত্রা পাল সহ অনেকে। জানা গেল, বিজেপির এই জেলা অফিসে যাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা লোকসভার নির্বাচনের আগে থেকেই নাকি আছেন নানা কেসের শিকার হয়ে।

    ওদিকে বিজেপির ডায়মন্ড হারবার লোকসভার পরাজিত প্রার্থী অভিজিৎ দাসের নির্বাচনী কার্যালয়ে যাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা ভোট গণণার দিন থেকেই অত্যাচারের শিকার হয়ে প্রার্থী অভিজিৎ দাস ওরফে ববির মঞ্জুশ্রী ভিলায় আছেন । সংখ্যাটা আশির ওপরে। ইতিমধ্যেই ঘর ছাড়া বিজেপির কর্মীদের মঞ্জুশ্রী ভিলায় এসে দেখে গেছেন কথা বলেছেন পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও দিলীপ ঘোষ। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল মঞ্জুশ্রী ভিলায় মঙ্গলবার আসবেন আমতলার জেলা অফিস হয়ে প্রত্যাশায় ছিলেন বিজেপির ঘর ছাড়া কর্মীরা। কারণ, আমতলার বারুইপুর রোড দিয়েই আলতাবেড়িয়া যাবার কথা বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের। এরই মধ্যে মঞ্জুশ্রী ভিলায় আশ্রিত কর্মীরা জেনে যান, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে আমতলার সিংহির মোড়ের বিজেপির জেলা অফিসে এমন মগজ ধোলাই করা হয়েছে যে, প্রতিনিধি দল আলতাবেড়িয়াতেই গিয়ে ফিরে যাবেন। মঞ্জুশ্রী ভিলায় আসবেন না। এমন খবর পেয়েই বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ সর্দারের সিদ্ধান্তের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে, আমতলার বারুইপুর রোড ঘোষ পাড়ায় আলতাবেড়িয়া যাবার পথে, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের কনভয় আটকে গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। হতভম্ব প্রতিনিধি দল। ঘর ছাড়া বিজেপির পুরুষ মহিলা কর্মীরা প্রতিনিধি দলে থাকা বিপ্লব দেবকে ঘিরে ধরে, কান্নায় ভেঙে পড়ে বলতে শুরু করেন আমরা অত্যাচারের শিকার হয়ে ঘর ছেড়ে আসতে বাধ্য হলাম।

    আমাদের খবর নেওয়া আশ্রয় দেবার কথা জেলা সভাপতি অভিজিৎ সর্দার একবারও ভাবলেন না। কোনও খবর নিলেন না। প্রার্থী অভিজিৎ দাসই সব করলেন। পাশে থাকলেন। তাঁর আশ্রয়েই আছি। আমরা কেমন ভাবে আছি, দেখবেন না। দশ মিনিটের জন্য হলেও আমাদের কথা শুনবেন না। কথা একটু দাঁড়িয়ে শুনলেও মঞ্জুশ্রী ভিলায় ভোট পরবর্তী হিংসার জেরে আশ্রয় নেওয়া বিজেপির কর্মীদের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল যে কারণেই হোক দেখতে গেলেন না। ক্ষুব্ধ বিজেপির কর্মীদের একাংশ এরপর আমতলার বিজেপির জেলা অফিসে তালা ঝুলিয়ে, জেলা সভাপতির অনুগামীদের বার করে দিলেন। শুরু হল দু পক্ষের ধাক্কাধাক্কি। প্রার্থী অভিজিৎ দাস বনাম জেলা সভাপতি অভিজিৎ সর্দারের অনুগামীদের মধ্যে বচসা বিক্ষোভ। এখানেই শেষ হল না সব কিছু। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল কলকাতায় চলে যাবার পর আমতলার জেলা অফিসে ফিরে এলেন বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ সর্দার। সূত্রের খবর, তিনি নাকি দলবল নিয়ে তালা কেটে অফিসে ঢুকলেন। সকাল দশটা থেকে দুপুর প্রায় তিনটে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্ধের ছবি প্রকাশ্যে এল সাধারণ মানুষ ও সংবাদ মাধ্যমের সামনে।

    এ বিষয়ে বিজেপির ডায়মন্ড হারবার লোকসভার পরাজিত প্রার্থী অভিজিৎ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক স্টেটসম্যানকে জানান, দাঁতের ডাক্তারখানায় আছেন। পরে কথা বলবেন। কথা বললেন বিজেপির পোড় খাওয়া জনৈক কর্মী। জানালেন, ছাব্বিশে এ রাজ্য থেকে বিজেপিকে জিরো করে দেবার প্ল্যান সফল হতে চলেছে। এটা অ্যাসিড টেস্ট। বিজেপির কিছু অবুঝ অদূরদর্শী কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জন্যই রাজ্য বিজেপির আজ এই অবস্থা। এদের কোনও আইবি টিম নেই। কত কোটি টাকার খেলা চলছে এনারা কী জানেন না। আমরা দেশকে বিজেপিকে ভালোবেসে মরতে বসেছি। সত্যিই বিজেপি আরবার নয়, এবারই পগারপাড়।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)