শহরে শাসকদলের রাশ কি আলগা হচ্ছে? সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটের পরে এই চিন্তাই বড় হয়ে উঠেছে দুই শহরে তৃণমূলের অন্দরে। তবে কি পুর পরিষেবা দিতে গিয়ে নানা পদক্ষেপ করায় শহরবাসী তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন— বিপর্যয়ের পরে এই প্রশ্ন তুলছেন পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি নিজেই।
পুরুলিয়া শহরে ফুটপাথ বেদখল ও বেলাগাম টোটোর চলাচল যানজটের অন্যতম কারণ। তাই নম্বরবিহীন অর্থাৎ পুরসভার অনুমোদন নেই এমন টোটোর শহরের রাজপথে চলাচল বন্ধ করতে গত শীতে লাগাতার অভিযান চালিয়েছিল পুরসভা ও প্রশাসন। একই সঙ্গে যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরের মেন রোডে পাইকারী বাজারে রাস্তার উপরে ট্রাক দাঁড় করিয়ে পণ্য নামানো বা ওঠানোর ক্ষেত্রেও কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করে পুরসভা। বুলডোজার নামিয়ে নডিহা, বি টি সরকার রোড, মিষ্টিমহল এলাকায় ফুটপাত বা রাস্তার জায়গা দখল করে গজিয়ে ওঠা বেশ কিছু দোকানের অংশ ভেঙে দেয় পুরসভা। রাঁচী রোড, ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ও কোর্ট মোড়ে সিমেন্টের স্ল্যাব বসিয়ে ফুটপাত দখল করেছিলেন কিছু ব্যবসায়ী। তা-ও দখলমুক্ত করা হয়।
ভোটের আগে বেশ কিছু জায়গায় বাড়িতে পাম্প বসিয়ে জল চুরি ঠেকাতেও অভিযান চালায় পুরসভা। কয়েক বছর আগে শহর নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যাগ ও থার্মোকল মুক্ত করতেও কড়াকড়ি করেছিল পুরসভা। গ্রীষ্মের সময় পুরুলিয়া শহরে পানীয় জলের হাহাকার থাকে। তাই গ্রামাঞ্চলে জল সরবরাহের জন্য যে জাইকা প্রকল্পে কাজ চলছে, সেখান থেকে যাতে পুরুলিয়া শহরকেও জল দেওয়া হয়, রাজ্যের কাছ থেকে সেই অনুমোদন আনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন পুরপ্রধান নবেন্দু। অভিমানী নবেন্দুর প্রশ্ন, ‘‘পুরসভা এত কাজ করেছে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের স্বার্থেই। সে কারণেই কি পুরবাসী লোকসভা ভোটে আমাদের বিরুদ্ধে গেলেন? যানজটের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগী হয়ে কি আমরা ভুল করেছিলাম?’’
বিষ্ণুপুর পুরসভাও গত কয়েক বছরে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেমন, শহরে সব গাড়িতে প্রবেশকর বা পথকর বসাতে চেয়েছিল পুরসভা। বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি ওঠায় শুধু পণ্যবাহী গাড়ির ক্ষেত্রেই পথকর আদায় চালু করা হয়। দীর্ঘ কয়েক বছর পরে পুরকর বৃদ্ধি করা হয়। তবে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে সে ভাবে বৃদ্ধি করা হয়নি বলে দাবি পুরসভার। বাড়ি বাড়ি পচনশীল ও অপচনশীল আবর্জনা তোলার ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। দু’বেলা শহরে সাফাই চালু হয়েছে কয়েক মাস আগে। রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ীদের অনুরোধে নিকাশি ব্যবস্থা করা হয়েছে। রবীন্দ্রস্ট্যাচু মোড়ে নিকাশি ব্যবস্থার সঙ্গে রাস্তা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। তবে সে জন্য কিছু ব্যবসায়ীকে তোলা হলেও পরে তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে পুরসভা। এখানে পুরকর্তৃপক্ষের আক্ষেপ, শহরের উন্নয়নেই পুরকর বৃদ্ধি ও পথকর বসানো হয়েছে। নাগরিকদের সুবিধা দিতেও বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও নাগরিক মন কেন পাওয়া গেল না বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে।
তবে কি দুই শহরেই তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধিরা জন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন?
পুরুলিয়ার দুই বরিষ্ঠ পুরপ্রতিনিধি বৈদ্যনাথ মণ্ডল ও বিভাসরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘কী ভাবে আমরা পরিষেবা দিই তা নাগরিকেরা জানেন। তারপরেও আমাদের কোথায় ত্রুটি, তা আমরা নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেই খুঁজে বের করব।’’
পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু জানান, তাঁরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে নাগরিক কনভেনশন করে বাসিন্দাদের মনের কথা শুনবেন।
(চলবে)