হুগলির শ্রীরামপুর থেকে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ অ্যাপ-বাস মিলছে নামমাত্র ভাড়ায়, রুটের বাস ফাঁকা
আনন্দবাজার | ১৯ জুন ২০২৪
কলকাতা-হাওড়া ছাড়িয়ে আশপাশের জেলাতেও পরিবহণ ব্যবস্থায় ঢুকে পড়ছে অ্যাপনির্ভর গাড়ি। শ্রীরামপুর থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত একটি সংস্থার অ্যাপনির্ভর ছোট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস চালু হয়েছে সম্প্রতি। ভাড়া খুবই কম। মাত্র ৩০ টাকা। ফলে, গরমে যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে ওই বাসে।
এই পরিস্থিতিতে ওই রুটের একটি বেসরকারি বাসরুটের কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাঁদের পরিষেবা বন্ধের পরিকল্পনা করেই ওই সংস্থা একই রুটে লোকসানে বাস চালাচ্ছে। তাঁদের বাস এসি নয়। একই দূরত্বে তাঁরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৪০ টাকা নেন। অথচ, তাঁদের থেকেও কম ভাড়ায় ওই সংস্থা এসি বাস চালাচ্ছে। ফলে, কয়েক দিনেই তাঁদের যাত্রিসংখ্যা কার্যত তিন ভাগ হয়ে গিয়েছে।
ওই বাসরুট সংগঠনের সম্পাদক রঞ্জন প্রামাণিক বলেন, ‘‘অন্যান্য জায়গায় যে ভাড়া নেওয়া হয়, তাতে ওরা বাস চালাক। সেটা না করে আমাদের রুট চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার খেলায় নেমেছে। আমাদের যাত্রী এত কমে গিয়েছে যে ডিজ়েলের টাকাই উঠছে না। আমরা, বাসের কর্মীরা (চালক-কন্ডাক্টর) তো পরিবার নিয়ে না খেতে পেয়ে মরব!’’
এ ব্যাপারে ওই বাস সংগঠনের তরফে রাজ্যের মুখ্যসচিব, পরিবহণমন্ত্রী, পরিবহণ সচিব, হুগলির জেলাশাসক, আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তাকে ই-মেলে অভিযোগপত্র পাঠানো হয়েছে। তাদের বক্তব্য, নিয়ম অনুযায়ী ওই বাসের এক জায়গা থেকে যাত্রী তুলে নির্দিষ্ট জায়গায় নামানোর কথা। কিন্তু নিয়ম ভেঙে সমস্ত বাসস্টপ থেকে যাত্রী তোলা-নামানো হচ্ছে অ্যাপে বুকিংয়ের মাধ্যমে।
এই বিষয়ে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, ‘‘বাস যত নামবে, তত তো ভাল। ভাড়া মানুষের আয়ত্তের মধ্যে থাকলে আপত্তি কোথায়!’’ পরে ভাড়া-বৈষম্য এবং রুটের বাসের সমস্যার প্রেক্ষিতে মন্ত্রী জানান, তিনি ওই অ্যাপ সংস্থার সঙ্গে কথা বলবেন। বিভিন্ন জায়গায় তাদের ভাড়ার তালিকা দেখবেন। পরিবহণমন্ত্রী বলেন, ‘‘গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি।’’
ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, তাদের বাস ভাড়া দেওয়া একটি সংস্থার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, প্রচারের উদ্দেশ্যেই ওই ভাড়া (প্রমোশনাল ফেয়ার) অল্প দিনের জন্য নেওয়া হচ্ছে। তবে, কত দিন এই ভাড়া নেওয়া হবে, ওই কর্পোরেট সংস্থাই বলতে পারবে। তাঁদের যুক্তি, প্রচারের উদ্দেশ্যে ‘অফার’ দেওয়া যেতেই পারে। উদাহরণ হিসাবে একটি মোবাইল সংস্থার বিনামূল্যে ৬ মাস সিম ব্যবহারের উদাহরণ দেন তাঁরা। সংস্থাটির তরফে সুমন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই সংস্থায় আমরা ভাড়ায় গাড়ি দিই। অ্যাপে বুকিং অনুযায়ী নির্দিষ্ট জায়গা থেকে যাত্রী তুলি এবং নামাই। সব নিয়ম মেনেই চলছে।’’ তাঁদের বক্তব্য, ওই বাসরুটের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ নেই।
হুগলি আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর জানিয়েছে, ওই অ্যাপনির্ভর বাসের পারমিট এখান থেকে দেওয়া হয়নি। আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা দেবাশিস রায় জানান, বাসরুটের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শ্রীরামপুরের সহকারী আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তাকে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা, প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে না পেরে বেসরকারি রুটের বাস বসে গেলে কর্পোরেট সংস্থা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াবে। তখন বেশি ভাড়ায় যাওয়া বা বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া রাস্তা থাকবে না। বেসরকারি বাসরুটের মালিকদের দাবি, অন্যান্য জায়গায় ওই সংস্থার বাসের ভাড়া ন্যূনতম ১৪০ টাকা। তাঁদের বক্তব্য, কোনও ভাবেই ৩০ টাকায় এত দূর বাতানুকূল ব্যবস্থা-সহ যাবতীয় খরচ মিটিয়ে লাভ করা সম্ভব নয়। সুপরিকল্পিত ভাবে গণ-পরিবহণ ব্যবস্থা ধ্বংসের চেষ্টা চলছে।