ছ’বছর আগে নভেম্বরের এক সকালে কলকাতা ছেড়ে কেরলের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন পরমেশ্বরন থনকপ্পন নায়ার। কলকাতার পদাতিক গবেষক বলে খ্যাত নায়ার ভেবেছিলেন, শেষ জীবনটা হট্টগোল ছেড়ে নিজেদের নারকেল বাগানে কাটিয়ে দেবেন। কিন্তু কলকাতার কারও সঙ্গে কথা হলেই তাঁর ভালবাসার শহরের কথা ভেবে উদ্বেল হতেন। এ শহরের সঙ্গে তাঁর বিনি সুতোর বাঁধনটুকু অবশেষে মৃত্যুতেই মুছে গেল। মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ এর্নাকুলাম জেলার চেন্নামঙ্গলম শহরে নায়ারের জীবনাবসান ঘটে বলে তাঁর ভাগ্নে বিজয়ন পানমপিল্লি জানিয়েছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। কলকাতায় কর্মরত বিজয়ন বলছিলেন, ‘‘গত এপ্রিলে শেষ দেখার সময়েও খুবই অসুস্থ ছিলেন মামা। তখনও কলকাতার কথা উঠলেই এখানে আসার জন্য আকুল হতেন।’’ নায়ারের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা রয়েছেন। এ দিন সন্ধ্যায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
কাঁসারিটোলার ইন্টারনেট, টিভিহীন ছোট ফ্ল্যাটে অজস্র বইয়ের সঙ্গে একাই থাকতেন নায়ার। নিজে রান্না করতেন আর বিভিন্ন গ্রন্থাগারে, বাড়িতে পড়াশোনা করতেন। গবেষণার কাজে কলকাতার রাস্তায় ঘুরতেন। স্ত্রী কেরলের স্কুলে পড়াতেন। উনিশ শতকের বাঙালি বিষয়ক গবেষক শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়কে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘কলকাতায় অনেক নামজাদা ইতিহাসবিদ থাকলেও কলকাতার ইতিহাস লেখা হয়নি। এটা ভেবেই কলকাতার ইতিহাসে হাত দিই।’’ ১৯৭০-এর দশকের শেষ থেকেই তাই সব কাজ ছেড়ে কলকাতাকে নিয়ে বই লিখছেন নায়ার। ‘আ হিস্ট্রি অব ক্যালকাটা স্ট্রিটস’-সহ ৬২-৬৩টি বইয়ের লেখক তিনি। শেষ বই ‘গান্ধী ইন ক্যালকাটা’ ২০১৯ সালে প্রকাশিত। তাঁর বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে টাউন হলের গ্রন্থাগারে।