হাই কোর্টের নির্দেশে অগস্ট থেকে বাতিল হবে ১৫ বছরের পুরোনো বাস, বিকল্প ভাবনায় বাস মালিকেরা
আনন্দবাজার | ১৯ জুন ২০২৪
নতুন বছরে বাতিল হতে পারে কয়েক হাজার বেসরকারি বাস। কলকাতা হাই কোর্টের পুরনো এক নির্দেশে এমনটাই হতে চলেছে। তাই ২০২৪ সালের জুন মাসে মাঝামাঝি সময়ে এসে আশঙ্কার প্রহর গুনতে শুরু করেছেন বেসরকারি বাসমালিকেরা। তাঁদের মতে, কলকাতা হাই কোর্টের এই নির্দেশ কার্যকর হলে এক দিকে যেমন বেসরকারি বাস পরিষেবা ভেঙে পড়বে, অন্য দিকে তেমনই কলকাতা শহরে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।
বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলছিল বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠন ও পরিবহণ দফতরের কর্তাদের মধ্যে। সম্প্রতি একটি নির্দেশিকা জারি করে পরিবহণ দফতর। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়, ইউরো ফোরের গাড়িগুলিকে নতুন পারমিট দেওয়া যাবে। এই নির্দেশিকা প্রকাশের পরে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন বেসরকারি বাসমালিকেরা। কারণ, এ ক্ষেত্রে ১ অগস্ট থেকে ১৫ বছরের পুরোনো বাস তুলে নেওয়ার পরেও অন্য রুটের নির্ধারিত বয়ঃসীমার মধ্যে থাকা গাড়িগুলিকে আবার যাত্রী পরিষেবার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন তাঁরা। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের ২০০৯ সালের একটি মামলার ভিত্তিতে কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় যে, ১৫ বছরের বয়ঃসীমা পেরিয়ে গেলে আর কোনও বাস কলকাতা শহর কলকাতা মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট অথিরিটি (কেএমডিএ)-র এলাকায় চালানো যাবে না। শহর কলকাতার পরিবেশ রক্ষার জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় বাসমালিকদের সংগঠন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিষয়টি পাঠিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্টে।
তার পরেই পরিবহণ দফতর কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয়। যে হেতু চলতি বছরে কলকাতার বিপুল সংখ্যক বাসের বয়স ১৫ বছরের সময়সীমা উত্তীর্ণ হয়ে যাবে, তাই গণপরিবহণ পরিষেবা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন বাসমালিকেরা। তবে পরিবহণ দফতরের প্রকাশিত নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোভিড সংক্রমণের সময় বহু বাসের রুট উঠে গিয়েছে। সেই রুটগুলিতে ইউরো ফোরের অধীন এমন অনেক বাস রয়েছে, যেগুলির বয়স ১৫ বছর পেরোতে ৫-১০ বছর বাকি। সেই বাসগুলিকেই পরিবহণ দফতর থেকে পারমিট বদল করে নতুন ভাবে চালানো যাবে। পরিবহণ দফতরের নির্দেশিকায় কলকাতা শহর ও শহরতলির গণপরিবহণ পরিষেবায় কোনও ব্যাঘাত ঘটবে না বলেই মনে করছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা।
এ প্রসঙ্গে সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘অতিমারির প্রকোপে প্রত্যক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি গণপরিবহণ। সেখানে সরকারের যত্নশীল হওয়া যতটা প্রয়োজন ছিল, তা লক্ষ করা যায়নি। পরিকাঠামোগত যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করার সরকারি উদ্যোগকে আহ্বান জানাই।’’ তবে বাসমালিকদের একাংশের দাবি, নতুন প্রযুক্তির বাস রাস্তায় নামাতে গেলে কমপক্ষে খরচ হবে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা। এখন পরিবহণ শিল্পের যা অবস্থা, তাতে বাসমালিকদের পক্ষে এত টাকা ঋণ নিয়ে নতুন বাস নামানো সম্ভব নয়। তাই পরিবহণ দফতর এ ক্ষেত্রে বিকল্প পথ খুঁজে দেওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন বেসরকারি বাসমালিকেরা।। আদালতের রায়ে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ১৫ বছর বয়ঃসীমা পার হওয়া বাসগুলি বন্ধ করে দিতে হবে। পরিবহণ দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বর্তমানে কলকাতায় প্রতি দিন চার থেকে পাঁচ হাজার বেসরকারি বাস চলে। কিন্তু আদালতের নির্দেশ কার্যকর হলে আর মাস ছয়েক পরে এই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন বেসরকারি বাসমালিকেরা। ইতিমধ্যেই বেসরকারি গাড়ির জরিমানা মকুব করে বেশি সংখ্যায় বেসরকারি বাস রাস্তায় নামানোর উদ্যোগী হয়েছে পরিবহণ দফতর। সঙ্গে নতুন নির্দেশিকাও সেই ক্ষতে প্রলেপের কাজ করবে বলেই মনে করছেন বেসরকারি বাসমালিকেরা।