• একা একা বিদেশ যাবেন? ঘুরে দেখার জন্য নানা রকম আয়োজন রেখেছে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া
    আনন্দবাজার | ২০ জুন ২০২৪
  • সময় বদলেছে। এখন মেয়েরা যেমন সংসার আর চাকরি একসঙ্গে সামলাচ্ছেন, তেমনই হইহই করে বেড়াতেও বেরিয়ে পড়ছেন। রেস্ত এবং প্রযুক্তির ডানায় ভর করে নিত্যনতুন গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন ২৪ থেকে ৫৪, সব বয়সের মহিলারাই। ছকে বাঁধা জীবন থেকে ছুটি নিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার সাধ আগেও ছিল। অনেক ক্ষেত্রে সাধ্যও ছিল। কিন্তু তবুও একলা বেড়াতে যেতে যেমন সাহস বা আত্মবিশ্বাস পেতেন না মহিলারা। এখন তথ্যের স্বনির্ভরতাই তাঁদের অচেনা-অজানা জায়গায় পা রাখার সাহস জোগাচ্ছে। নেটদুনিয়ার দৌলতে একাকী বেড়াতে যাওয়ার অনেক প্রয়োজনীয় তথ্যও চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। তা হলে আর বাধা কোথায়! দেশ তো বটেই, বিদেশেও স্বচ্ছন্দে একাই ঘুরে আসছেন মেয়েরা।

    ব্যস্ত জীবন থেকে খানিক সময় বার করে যদি বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার সাধ জাগে, তা হলে ফিলাডেলফিয়া খুব একটা মন্দ হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প শহর ফিলাডেলফিয়া যেমন ইতিহাসপ্রসিদ্ধ, তেমনই পর্যটনের দৌলতে এখন এ শহরে থাকা, খাওয়া, ঘোরার কোনও সমস্যাই নেই। মেয়েরা একাই গোটা শহর ঘুরে দেখতে পারেন। দিন কয়েক নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে থাকতেও পারেন।

    তা হলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, ফিলাডেলফিয়ায় কী কী আকর্ষণ রয়েছে, যা বার বার হাতছানি দিতে পারে।

    শিল্প-ভাস্কর্যে পরিপূর্ণ রঙিন শহর ফিলাডেলফিয়া। আমেরিকার প্রাণকেন্দ্র পেনসিলভানিয়ার সবচেয়ে বড় শহর ফিলাডেলফিয়া। বলা হয় অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু। আমেরিকার স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ফিলাডেলফিয়ার নাম। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মার্কিনদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ফিলাডেলফিয়া ছিল আমেরিকার রাজধানী। আমেরিকার সংবিধান এখানেই রচিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সব কিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে এই প্রাচীন শহরের নাম।

    ফিলাডেলফিয়ার যত ভাস্কর্য আছে, আমেরিকার আর কোনও শহরে নেই। প্রাচীন গ্রিসের স্থাপত্য-ভাস্কর্যের ছোঁয়া আছে এখানে। ফিলাডেলফিয়ার রাস্তায় ঘোরার সময়ে মনে হবে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে চলে এসেছেন। রাস্তার মোড়ে বসানো গ্রিক দেব-দেবীর মূর্তি, আমেরিকার স্বাধীনতার ইতিহাসে নামী ব্যক্তিত্বদের মূর্তি। শহর ঘুরে দেখতে পারেন ইনডিপেনডেন্স ন্যাশনাল হিস্টরিক্যাল পার্ক, লিবার্টি বেল সেন্টার, ফিলাডেলফিয়া মিউজ়িয়াম অফ আর্ট, জন এফ কেনেডি প্লাজ়া— সংক্ষেপে লাভ প্লাজ়া, ডিলওয়ার্থ পার্ক, ইতালিয়ান মার্কেট।

    সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র ফিলাডেলফিয়া। মিলার থিয়েটার দেখে চলে যেতে পারেন পেনসিলভানিয়া আকাদেমি অফ ফাইন আর্টসে। এটি দেশের সুপ্রাচীন শিল্প জাদুঘর, যা না দেখলে ঘোরাটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তিন হাজারের বেশি দুষ্প্রাপ্য ছবি, শিল্পকলার সংগ্রহশালা এই জাদুঘর। ভ্যান গখের ৭টি দুষ্প্রাপ্য ছবি আছে এই জাদুঘরে।

    একটা সময়ে ইউরোপীয়দের আগমনের কারণে ফিলাডেলফিয়ায় শিল্পকারখানা ও রেল রোড দ্রুত গড়ে ওঠে। এই শহরের বাসিন্দাদের বিরাট অংশ এসেছে মূলত তিনটি দেশ থেকে— আয়ারল্যান্ড, জার্মানি ও ইতালি। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ফিলাডেলফিয়া হয়ে ওঠে আফ্রো-আমেরিকানদের প্রধান গন্তব্য। ঔপনিবেশিক ইতিহাসের নানা চিহ্ন ছড়িয়ে আছে গোটা শহর জুড়ে। ফিলাডেলফিয়া শহরের ওয়ালনাট স্ট্রিট আর ফিফটিয়েথ স্ট্রিট যেখানে একে অপরকে কেটেকুটে নিজের মতো চলে গিয়েছে, সেখানেই রয়েছে ‘ট্রু আমেরিকান হিরো’ পল রোবসনের বাড়ি। ঐতিহাসিক এই শহরে পশ্চিমাংশের অন্য পুরনো বাড়িগুলির সঙ্গে দৃশ্যত কোনও তফাত নেই। ঔপনিবেশিক যুগের ইংলিশ এবং স্প্যানিশ স্থাপত্যরীতির মিশেলে তৈরি। ফাঁপা ইটের গাঁথনি। কাঠের দেওয়াল। সাদার্ন পাইন ফ্লোরিং। উঁচু বারান্দা। এই বাড়িটা এখন শহরের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

    প্রাচীনতম অপেরা হাউসে কাটান একটি সন্ধ্যা

    ফিলাডেলফিয়ায় ৬৭টি ‘ন্যাশনাল হিস্টোরিক্যাল ল্যান্ড মার্কস’ এবং ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট অফ ইনডিপেনডেন্স হল’ আছে। ২০১৫ সালে এই শহর ‘অর্গানাইজ়েশন অফ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার’-এর সদস্য হয়। এই শহরে এলে ঘুরে দেখতেই হবে এখানকার চিড়িয়াখানা, লাইব্রেরি, স্টক এক্সচেঞ্জ। আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো অপেরা হাউস এখানেই আছে। আমেরিকার প্রাচীনতন ওয়ালনাট স্ট্রিট থিয়েটারও এ শহরেই। ১৮০৯ সাল থেকে আজও এই থিয়েটার কত-শত মানুষের মনোরঞ্জন করে আসছে। ফিলাডেলফিয়ায় ঘুরতে গেলে কোনও এক সন্ধ্যায় এই থিয়েটারে বসে নামী কলাকুশলীদের কাছ থেকে দেখার সুযোগ মিস করবেন না।

    খাবারে জাপানি-ইতালীয় স্বাদ

    বেশির ভাগ রেস্তরাঁতেই জাপানি খাবার পাবেন। উত্তর পেনসিলভানিয়ার কনভেশন সেন্টারে গেলে ইতালীয় খাবার চেখে দেখতেই হবে। পশ্চিম ফিলাডেলফিয়াতেও ইতালীয় রেস্তরাঁর ছড়াছড়ি। এখানকার বিখ্যাত খাবারের মধ্যে রয়েছে তিজস্টেক, পর্ক স্যান্ডউইচ। আইরিশ নানা কুইজ়িনও পাওয়া যাবে রেস্তরাঁগুলিতে।

    যত খুশি কেনাকাটি করুন

    খুব ভাল ভাল বুটিক রয়েছে ফিলাডেলফিয়ায়। যত খুশি কেনাকাটি করুন, কর দেওয়ার ঝক্কি নেই। ঘর সাজানোর নানা জিনিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম অলঙ্কার, হাতে তৈরি নানা জিনিস পাওয়া যাবে। কুইন ভিলেজে রয়েছে প্রাচীন বস্ত্রশিল্পের কারখানা। স্থানীয় নকশায় তৈরি পোশাক তো রয়েছেই, চাইলে আপনার মনের মতো করে পোশাকও তৈরি করে দেবেন তাঁরা। যদি আর একটু ভিতরে যেতে চান তা হলে মূল শহর থেকে ৩৫ মাইল উত্তর-পশ্চিমে গেলে সেখানে বিশাল এক মার্কেট পাবেন। প্রায় ১৫০ রকম নামীদামি ব্র্যান্ডের পোশাক বেশ কিছুটা সস্তায় বিক্রি হয় সেখানে। ব্র্যান্ড অনুযায়ী ২৫ থেকে ৬৫ শতাংশ ছাড় থাকেই।

    এক রাতের হুল্লোড়

    ঐতিহাসিক শহর হলে রাতে হইহুল্লোড়ের ব্যবস্থা থাকবে না, তা একেবারেই নয়। বরং ফিলাডেলফিয়ায় রাতের জীবন বেশ রঙিনই। মধুচন্দ্রিমায় গেলে সঙ্গীকে নিয়ে নিশ্চিন্তে চলে যান হুইস্কি বার, বিয়ার গার্ডেন বা কোনও নাইট ক্লাবে। সুশি বারও আছে।

    মহিলাদের জন্য সেরা আকর্ষণ হল স্পা ক্লাব। ‘দ্য রিটেনহাউস স্পা ক্লাব’-এ উৎকৃষ্ট মানের স্পা, মাসাজের ব্যবস্থা আছে। কেনাকাটি করে ক্লান্ত হয়ে গেলে ঢুঁ মেরে আসতেই পারেন স্পা ক্লাবে।

    বিভিন্ন রকম হোটেল রয়েছে ফিলাডেলফিয়ায়। পকেটের ভার দেখে বেছে নিতে পারেন পছন্দের হোটেল।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)