স্নানযাত্রার দিন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহকে মন্দির সংলগ্ন স্নানপিড়ি মাঠে স্নানমঞ্চে নিয়ে গিয়ে ২৮ ঘড়া গঙ্গাজল এবং দেড় মণ দুধ দিয়ে স্নান করানো হয়। মনে করা হয়, ওই পরিমাণ দুধ-গঙ্গাজলে স্নান করে তিন দেবতার জ্বর আসে। কবিরাজ এনে মন্দির বন্ধ রেখে সেবা-শুশ্রূষার পরে তাঁরা সুস্থ হন। সোজারথের দিন রথে চাপিয়ে তিন দেবতাকে জগন্নাথের সখী পৌর্ণমসির বাড়িতে (প্রচলিত কথায় ‘মাসির বাড়ি’) নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যান্য বছর স্নানের পরেই তিন বিগ্রহকে মন্দিরের গর্ভগৃহে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বার দিনভর তিন বিগ্রহকে স্নানমঞ্চেই রাখা হবে। স্নান শুরু হবে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে। বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে মন্দিরের প্রধান সেবাইত সৌমেন অধিকারী এবং মন্দির কমিটির সম্পাদক পিয়াল অধিকারী জানান, এ বার স্নানযাত্রার ‘মোক্ষ যোগ’ রয়েছে। সেই কারণেই জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রাকে দিনভর স্নানমঞ্চেই রাখা হবে ভক্তদের দর্শনের জন্য। দিনভর পুজো, ভোগ নিবেদন সেখানেই হবে। সে জন্য স্নানমঞ্চে এবং মাঠে ম্যারাপ বাঁধা হচ্ছে।
মন্দির কর্তৃপক্ষ জানান, পর্যটন কেন্দ্রের কাজের এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। এই পর্যায়ে স্নানমঞ্চের স্নানবেদি নতুন করে করা হয়েছে।
পিয়াল জানান, স্নানের পরে তিন দেবতাকে ‘অবকাশ’ বেশ পরানো হবে। তার পরে ‘সাতবেশ’ বা ‘শৃঙ্গারবেশ’। এর পরে ‘গজবেশ’। সন্ধ্যায় অন্নভোগের পরে তিন বিগ্রহকে মন্দিরের গর্ভগৃহে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। জগন্নাথকে মানুষরূপে পুজো করা হয়। সেই অনুযায়ী সব আচার-অনুষ্ঠান করা হবে। সৌমেন জানান, এর আগে স্নানযাত্রায় ‘মোক্ষ যোগ’ ছিল ১৯৭৭ সালে, অর্থাৎ, ৪৭ বছর আগে। সে বার দেবতাদের স্নান শুরু করা হয়েছিল সকাল পৌনে ছ’টায়।
এ বারের উল্টোরথের আগে দ্বাদশ ‘গোপাল উৎসব’ হবে। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানান, এটিও নতুন সংযোজন। পিয়ালের দাবি, শ্রীচৈতন্য মাহেশের রথের চারপাশে নামকীর্তন করেছিলেন দ্বাদশ গোপালকে নিয়ে। সেই ঘটনা স্মরণ কর উল্টোরথের আগের দিন, অর্থাৎ, ১৪ জুলাই শ্রীচৈতন্যের বিগ্রহ নিয়ে জগন্নাথ মন্দির থেকে পদব্রজে খোল-করতাল সহযোগে নামকীর্তন করতে করতে মাসির বাড়ি যাওয়া হবে। সেখানে রথের চারপাশে সাত বার প্রদক্ষিণ করা হবে। তার পরে মাসির বাড়িতে জগন্নাথের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে শ্রীচৈতন্যকে। পরের দিন উল্টোরথে তিন দেবতা ফিরবেন জগন্নাথ মন্দিরে।