অর্ণব আইচ: মৃতের আত্মীয় সেজে শেয়ারের বিপুল টাকা হস্তগত করার ছক। মুম্বইয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে কলকাতায় গা ঢাকা দিয়েছিল এই আন্তঃরাজ্য চক্রের মাথা। কলকাতা পুলিশের সাহায্যে মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকার একটি ডেরায় তল্লাশি চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেন মুম্বই পুলিশের আধিকারিকরা।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত ওই ব্যক্তির নাম চেতন ভূপেন্দ্র সাউ। তার সঙ্গে চক্রের আরও কয়েকজন যুক্ত বলে অভিযোগ। মূলত মুম্বইকেই কেন্দ্র করে এই চক্রের সদস্যরা টাকা হাতানোর ছক কষে। শেয়ার বাজারের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, এমন অনেক ব্যক্তির মৃত্যু হলে তাঁর ডি ম্যাট অ্যাকাউন্ট অকেজো হয়ে যায়। আবার অনেক সময় ওই অ্যাকাউন্ট দীর্ঘদিনের জন্য কেউ ব্যবহার না করলেও তা অকেজো হতে পারে। কিন্তু ওই অ্যাকাউন্টে কিছু পরিমাণ টাকা থাকলে তা অ্যাকাউন্টের মালিকের পক্ষে তাঁর পরিবারের লোক বা পরিজনরা যাতে ফেরৎ নেন, তার জন্য ‘সেবি’ বিজ্ঞাপন দেয়। অনেক সময়ই মৃত শেয়ার ব্যবসায়ীর আত্মীয়দের চোখে ওই বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে না। কিন্তু ওই চক্রটির নজরে থাকে এই ধরনের বিজ্ঞাপন।
চক্রের মাথারা ওই মৃত ব্যক্তির পরিচয় জেনে তাঁর ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে। একইসঙ্গে নিজেদের ওই মৃত ব্যক্তির আত্মীয় পরিচয় দিয়েও তারা তৈরি করে ভুয়ো পরিচয়পত্র। এভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ওই ভুয়ো পরিচয়পত্র দাখিল করে টাকা ফেরৎ পাওয়ার জন্য আবেদন জানায়। একইভাবে তারা ভুয়া পরিচয়পত্রর মাধ্যমে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খোলে। মৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্টের টাকা শেষ পর্যন্ত জালিয়াতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই যায়।
গত বছর এই চক্রটি এভাবে একাধিক মৃত ব্যক্তির ডি ম্যাট অ্যাকাউন্ট থেকে একের পর এক জালিয়াতি করে। মুম্বই পুলিশের কাছে মোট ১৪ কোটি ১১ লাখ টাকা জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের হয়। এই ব্যাপারে মুম্বই পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আর্থিক দুর্নীতি শাখা তদন্ত শুরু করে। মুম্বইয়ের গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, মৃত ব্যক্তিদের ভুয়ো আধার কার্ড, প্যান কার্ড দাখিল করে যে ১৪ কোটি টাকার জালিয়াতি হয়েছে, তার মধ্যে ধৃত চেতন ভূপেন্দ্র সাউ ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা তুলে নেয়। এর মধ্যে চেতনের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাাকউন্ট থেকেই ২ কোটি ৮ লাখ টাকা মুম্বইয়ের গোয়েন্দারা উদ্ধার করেন।
তাঁরা তল্লাশি চালানোর পরই মুম্বই থেকে পালিয়ে গা ঢাকা দেয় চেতন। কয়েকদিন আগে চেতন কলকাতায় এসে নিউ মার্কেটের হোটেলে ওঠে। গা ঢাকা দেওয়ার জন্য হোটেল পালটাতে থাকে সে। মুম্বইয়ের গোয়েন্দারা তার মোবাইলের উপর নজরদারি করেই একটি হোটেল চিহ্নিত করেন। মঙ্গলবার রাতে নিউ মার্কেট থানার সহযোগিতায় ওই হোটেলের একটি ঘর থেকে চেতনকে মুম্বইয়ের গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেন। তাকে মুম্বইয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।