বাঁ পা থেকে দেড় কিলোর টিউমার বাদ! রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে অসাধ্যসাধন
প্রতিদিন | ২০ জুন ২০২৪
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একাধিক হাসপাতাল ঘোরার পর তাদের বলা হয়েছিল বাঁ পা কেটে বাদ দিতে হবে। কারণ ওই পায়ের টিউমার থেকে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সেই পা এখন সচল। দিব্যি হাঁটছেন রোগী। ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ১০ সেন্টিমিটার চওড়া, ৮ সেন্টিমিটার গভীরতায় দেড় কেজি ওজনের টিউমার অস্ত্রোপচারে বাদ দিয়ে আবার নজর কাড়লেন পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের (Deben Mahata Hospital) চিকিৎসকরা। ওই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক পবন মণ্ডলের তত্ত্বাবধানে এই সাফল্যের মুখ দেখে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপাল সুকোমল বিষয়ী বলেন, “অনেকটাই জটিল ছিলো এই অস্ত্রোপচার । চিকিৎসকরা ধৈর্য নিয়ে এই কাজ করেছেন। তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। “
বেশ কয়েক বছর ধরেই দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বল্প পরিকাঠামোতেই একের পর এক জটিল অস্ত্রোপচার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এইসব জটিল অস্ত্রোপচারের পুরোভাগে রয়েছেন শল্য চিকিৎসক পবন মণ্ডল। তাঁর কথায়, ” এই কাজটাও সহজ ছিল না। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফল হয়েছি। রোগীর অবস্থা এখন স্থিতিশীল। ওই বাঁ পা দিয়েই হাঁটতে পারছে।” এই অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে কিছু সংখ্যক পেশী ও নার্ভ বাদ দিতে হয়েছে। যা পায়ের নড়াচড়ায় ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। দেড় কিলো ওজনের ওই টিউমার একেবারে হাড় পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। পুরুলিয়ার বলরামপুর থানার বেড়াদা গ্রামের ৩১ বছরের বধূ শিবানী মাহাতোর চোখমুখে এখন খুশির ঝিলিক। তার কাকা অশ্বিনী মাহাতো বলেন, ” একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাঁ পা টা বাদ দিতে বলেছিল । দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা অক্ষত রেখে অসাধ্যসাধন করেছেন। এটা কোনদিন ভুলব না।”
৩১ বছরের ওই বধূর বছর ছয়েক আগে হাঁটুর নিচে ফুলতে শুরু করে। তারপর পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ড, দুর্গাপুরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয় ওই মহিলার। কিন্তু ফোলা কিছুতেই কমে না। তাছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে ওই অস্ত্রোপচারের জায়গায় ক্ষত সারছিল না। তিন সপ্তাহ আগে ওই বধূ দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে এক মঙ্গলবারে আসেন।
মঙ্গলবার ওই আউটডোরে বসেন চিকিৎসক পবন মণ্ডল। বিভিন্ন রিপোর্ট দেখে তিনি বুঝতে পারেন, একাধিক অপারেশন হয়েছে বাঁ পায়ের। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর বোঝা যায় ওই বাঁ পায়ে বড়সড় একটি টিউমার রয়েছে। তাই ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরী ভিত্তিতে মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। ওই মেডিক্যাল বোর্ডে চিকিৎসক পবন মণ্ডল ছাড়াও ছিলেন অর্থোপেডিক সার্জেন ফাগুরাম মাঝি, আরেক সার্জেন সোমনাথ বিশ্বাস ও অ্যানাস্থেসিয়া অজিতপ্রসাদ মুর্মু ও অনমিত্র মণ্ডল। সম্প্রতি আড়াই ঘন্টা ধরে ওই অস্ত্রোপচারের পর এখন ওই বধূ স্বাভাবিকভাবেই হাঁটতে পারছেন। তবে তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।