• গ্ৰুপ চ্যাটের স্ক্রিনশট প্রকাশ্যে এনে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বড় অভিযোগ কুণালের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২১ জুন ২০২৪
  • নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা, ২০ জুন: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নয়া মোড় নিল রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের এক্স হ্যান্ডেলের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে। একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কিছু কথোপকথনের স্ক্রিনশট এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে কুনাল ঘোষ লিখেছেন, “শিক্ষা সংক্রান্ত চাকরি মামলা দেখিয়ে কিছু ব্যক্তি বিপুল টাকা তুলছেন বলে অভিযোগ। একটি গ্রুপের পোস্টে তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। এসব কথা আগেও কানে এসেছে। বহু সংখ্যক কর্মপ্রার্থীর কাছ থেকে মামলার নামে বিপুল টাকা তোলার কথাগুলি সত্য কিনা জানতে তদন্ত হোক। অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়ে জেরা দরকার।” উল্লেখ্য, চাকরি দেওয়ার নাম করে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছিল আগেই। এবার এই সংক্রান্ত একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের চ্যাটের স্ক্রিনশট প্রকাশ্যে এনে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি জানালেন কুণাল।

    তবে কি এমন রয়েছে কুনালের পোস্টে? ‘২০১৪ বঞ্চিত টেট পাশ (হাওড়া)’ শীর্ষক ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সৌমিত্র চ্যাটার্জী নামক এক ব্যক্তি লিখেছেন- ‘একজন ল ইয়ার আমার এক পরিচিতর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন কেসের জন্য।’ তাঁকে সমর্থন জানিয়ে কৌশিক নামক অপর এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘ফিরদৌসের কাছে গিয়েছিলাম। বলছে ২৫ হাজার দাও হয়ে যাবে! আমি কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে এলাম!’ এরপরই পার্থ নামক অপর এক ব্যক্তি লিখেছেন- ‘ফিরদৌস আমার থেকে ৪০ নিয়েছিল। মনে হচ্ছে পুরোটাই জলে গেলো! সব কেস করেছি, ১ লক্ষ জলে গেল!’ কুনালের পোস্টে এই কথোপকথনই উঠে এসেছে। এর থেকে স্পষ্ট, কিছু আইনজীবীকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। বহু মামলা হয়েছে চাকরি সংক্রান্ত, যার জন্য আইনজীবীরা হাজার-হাজার টাকাও নিয়েছেন। কিন্তু তাতে লাভের মুখ দেখেননি চাকরি প্রার্থীরা, তাঁদের কথোপকথন থেকে তাই অনুমান করা যাচ্ছে। তবে এই ফিরদৌস কে? তা স্পষ্ট নয়। স্বাভাবিক ভাবেই কুনালের এহেন পোস্টকে ঘিরে কমেন্ট বক্সে উঠে এসেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে জল্পনা।

    কুনাল ঘোষের এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট দাবি, “চাকরি প্রার্থীদের একাধিক গ্রুপে এরকম বহু পোস্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে- নিয়োগ দুর্নীতি মামলাকে দেখিয়ে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এটাও তো এক ধরনের দুর্নীতি। আমি চাই, তদন্তকারীরা সত্যিটা খুঁজে বের করুক। সেজন্যই এই পোস্ট।” এবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার একটু অতীত ঘেঁটে দেখা যাক। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অভিযোগে ২০২২ সালের ২৩ জুলাই রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। সেই থেকে এখনও জেলবন্দি পার্থ।

    গত ২২ এপ্রিল ওই মামলার রায় দিতে গিয়ে ২০১৬-র এসএসসির পুরো প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। ফলে ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীর ভবিষ্যত প্রশ্নের মুখে দাঁড়ায়। কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৃণমূল কংগ্রেস। শীর্ষ আদালত অবশ্য ওই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে তদন্তকারী সংস্থাকে যোগ্য ও অযোগ্যদের পৃথক তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে ১৬ জুলাই, ২০২৪। তার আগে কুণালের এই নয়া পোস্ট ঘিরে শোরগোল তৈরি হয়েছে। আদেও কি যোগ্য, অযোগ্যদের পৃথক তালিকা তৈরী হবে নাকি শেষমেষ চাকরিহারা হতে হবে যোগ্যদেরও? এই প্রশ্নই যেন বারংবার উঁকি দিচ্ছে শিক্ষামহলে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের পাশে সর্বদাই ছিল তাঁরা এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)