স্টাফ রিপোর্টার: কলকাতা, শিলিগুড়ি, আসানসোল, সল্টলেক-সহ বিভিন্ন কর্পোরেশনের মেয়র ও প্রশাসনিক কর্তাদের বৈঠকে পুরসভাগুলির পরিষেবা এবং কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেজাজ হারিয়ে বললেন, “এবার কি আমাকে ঝাঁটা নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে?” পাশাপাশি প্রতিটি পুরসভায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিষেবায় গতি বৃদ্ধি করতে নির্দেশ দিলেন তিনি। নগরনিগম ছাড়াও হলদিয়ার মতো বেশ কয়েকটি উন্নয়ন পর্ষদের কর্তাদেরও একাধিক ইস্যুতে পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। জেলাভিত্তিক ও বিভাগীয় প্রশাসনিক রিপোর্ট পেয়ে তিনি এদিন এতটাই ক্ষুব্ধ ছিলেন যে, আগামী সোমবারই রাজ্যের ১২১ টি পুরসভার পুরপ্রধান ও প্রশাসকদের নিয়ে নবান্নে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। এদিনের মতো ওই ২৪ জুনের বৈঠকেও থাকবেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিবরা।
সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Elections 2024) রাজ্যের ১২১টি পুরসভার মধ্যে ৬৯টিতে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি, দুটিতে এগিয়ে আছে কংগ্রেস। হাওড়া পুরনিগম এলাকায় তৃণমূল জিতলেও সেখানকার পুর পরিষেবা এবং ছয়বছর ধরে ভোট না হওয়া নিয়ে নাগরিকদের একাংশের ক্ষোভ রয়েছে বলে রিপোর্ট। খাস কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৭টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে তৃণমূল। আসানসোল, বিধাননগর, শিলিগুড়ির মতো ‘কর্পোরেশন’ এলাকায় বিজেপি যথেষ্ট আধিপত্য দেখিয়েছে। বস্তুত লোকসভা নির্বাচনে কর্পোরেশন, পুরসভা ও শহরাঞ্চলে তৃণমূল কংগ্রেসের এমন ফলের জেরেই উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে এদিন মনে করছেন নবান্নের কর্তারা।
নবান্ন সূত্রের খবর, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অধিকাংশ পুরসভার রাস্তাঘাট বেশ খারাপ। বহু এলাকায় রাস্তায় আলো জ্বলছে না। ময়লা-আবর্জনা দিনের পর দিন রাস্তার মোড়ে মোড়ে পড়ে আছে। অনেক ওয়ার্ডে নিকাশি বন্ধ হয়ে আছে। তার ওপর জবরদখলের সমস্যা। আপনারা কী করছেন? কাউন্সিলররা কি ‘ফিল্ডে’ নামছে না? নাকি শুধু নিজেদের ইনকামের কথা ভাবছে?’’ হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের কাজ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানতে চান, ‘দায়িত্বে কে কে আছেন, কী কী কাজ করছেন?’ নবান্ন সূত্রে খবর, কলকাতা, আসানসোল, শিলিগুড়ি-সহ একাধিক বড় পুরসভা এলাকায় নাগরিক পরিষেবার ত্রুটি নিয়ে বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। রিপোর্ট হাতে পেয়ে এতটাই রেগে যান মমতা যে, এক সময়ে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশ্ন করেন, ‘‘এবার কি আমাকে ঝাঁটা নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে?’’
বিধাননগর কর্পোরেশন এলাকায় জঞ্জাল ফেলার সমস্যা রয়েছে। আগে মোল্লার ভেড়িতে জঞ্জাল ফেলা হত। কিন্তু গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশে আপত্তি থাকায় সল্টলেকের ময়লা এখন ধাপায় নিয়ে ফেলা হয়। বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী ভিডিও কনফারেন্সে মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, দিনে দুবারের বেশি ধাপায় ময়লা ফেলার গাড়ি যাচ্ছে না। স্থান সংকুলানের সমস্যা প্রবল। বিধাননগর ও নিউটাউন মিলিয়ে বৃহৎ এলাকা নিয়ে এই জঞ্জাল সমস্যা নিরসনে বিকল্প জমির সন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।