• ডোকরা শিল্পে 'সুদিন' ফিরেছে, কী ভাবে যাবেন 'শিল্পগ্রাম'?
    এই সময় | ২১ জুন ২০২৪
  • কুটির শিল্প বাংলার আভিজাত্য। একইসঙ্গে সম্পদও বলা যেতে পারে। আবার রাজ্যের অর্থনীতির একটা অংশও এই কুটির শিল্পের উপরে নির্ভরশীল। কারণ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বহু মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই কুটির শিল্পের উপরে নির্ভর করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। রাজ্যর যে সমস্ত কুটির শিল্প ভিনরাজ্যে তথা বিদেশের বাজারেও নিজস্ব পরিচয় তৈরি করেছে, তার মধ্যে অন্যতম ডোকরা। আর এই ডোকরা বলেই প্রথমে যে জেলার নাম মাথায় আসে তা হল বাঁকুড়া। এই জেলায় গন্ধেশ্বরী নদীর তীরে বিকনা গ্রাম ডোকরা শিল্পের জন্য বরাবরই প্রসিদ্ধ।বিকনা আবার 'শিল্পগ্রাম' বলেও পরিচত। ঠিক কবে বা কী ভাবে এখানে ডোকরা শিল্পের প্রচলন হয়, তা অবশ্য নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারেন না। কারও মতে সে প্রায় দেড়শ বছর আগের কথা। কেউ কেউ আবার বলেন, সময়টা আরও বেশি। তবে এই শিল্পের প্রচলন হওয়ার পর তা বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। গ্রামের বহু পরিবার জড়িত এই শিল্পের সঙ্গে। মাঝের এই সময়টায় বহু উত্থানপতনের সাক্ষীও থেকে ডোকরা শিল্প। একটা সময় বেশ মন্দার মুখও দেখেন এখানকার ডোকরা শিল্পীরা। তবে আবার 'সুদিন' ফিরেছে। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, একদিকে যেমন চাহিদা বেড়েছে, তেমনই নতুন প্রজন্মের মধ্যেও এই কাজে আসার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

    সময়ের সঙ্গে মানুষের রুচি ও পছন্দ বদলেছে। আবার মানুষের পছন্দের মতো সামগ্রী জোগান দিতে নিজেদের কাজেও পরিবর্তন এনেছেন ডোকরা শিল্পীরা। এক সময় এখানকার শিল্প মূলত লক্ষ্মীর ভাঁড়, চাল মাপার কৌটো, কিংবা হাতি, ঘোড়া আর দেবদেবীর মূর্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে বর্তমানে সেই পরিধি আরও বেড়েছে। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এখন তৈরি হচ্ছে সুদৃশ্য গয়না, শোপিস, অ্যাশট্রে, ঘর সাজানোর নানান সামগ্রী ও নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র। এমনকী বাড়ির দরজা জানলার হাতল বা কাঁটা চামচেও এখন থাকছে ডোকরার ছোঁয়া।

    সোমনাথ কর্মকার নামে এক শিল্পী বলেন, 'ডোকরা শিল্পে সুদিন ফিরেছে বলা যায়। নতুন শিল্পীরাও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।' আবার চন্দন কর্মকার নামে অপর এক শিল্পী বলেন, 'বিদেশেও এর চাহিদা রয়েছে। বিশ্ববাংলা, মঞ্জুশার শোরুমেও আমাদের তৈরি সামগ্রী যায়। বিশেষত আশ্বিণ মাসে ডোকরার তৈরি দুর্গার এত চাহিদা থাকে যে সরবরাহ করেও শেষ করা যায় না।'

    শিল্পীরা নিজেরা তৈরি করেন ও বিক্রি করেন। সেক্ষেত্রে কেউ এখানে আসতে চাইলে বাঁকুড়া স্টেশন থেকে নেমে টোটো করে সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন বিকনা শিল্প গ্রামে। স্টেশন থেকে দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। অন্যদিকে বাঁকুড়া শহর থেকে বিকনা শিল্প গ্রামের দূরত্ব চার কিলোমিটার। বিভিন্ন দামের সামগ্রী রয়েছে। সেক্ষেত্রে দুর্গার মূর্তি এখানে মোটামুটি ১৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০০ টাকা পর্যন্ত দামের রয়েছে। মূলত সাইজের উপরে নির্ভর করে দাম। অপর দিকে মহিলাদের গয়না ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। পাশাপাশি ৪৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের হরেক রকমের শোপিসও পাওয়া যায় বিকনা গ্রামে।
  • Link to this news (এই সময়)