• রেলের জমিতে বসবাসকারীরা পাবেন দখলনামা: গৌতম বোর্ড মিটিংয়ে সিপিএমের ওয়াকআউট
    বর্তমান | ২৯ নভেম্বর ২০২২
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: এবার রেলের জমিতে বসবাসকারীরা পাবেন ‘দখলনামা’ বা পজেশন সার্টিফিকেট। সোমবার শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মেয়র গৌতম দেব। একইসঙ্গে তিনি রেলের অব্যবহৃত জমিতে বসবাসকারীদের জমির অধিকার পাইয়ে দিতে রেলমন্ত্রকের বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানান। তবে এই ইস্যুতে বোর্ড মিটিংয়ের শেষলগ্নে সিপিএম কাউন্সিলাররা সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। তাঁদের উত্থাপন করা প্রস্তাব নিয়ে সভায় আলোচনা না হওয়ায় তাঁরা ওয়াকআউট করেন। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য বিষয়টিকে পাত্তা দিতে নারাজ। পুরসভার অন্দরে এ নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। 

    শিলিগুড়ি শহরে রেলের অব্যবহৃত জমিতে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বস্তি। হাজার হাজার মানুষ ওই বস্তিগুলিতে বসবাস করছে। তাদের জমির অধিকার দেওয়ার দাবি নিয়ে এদিন পুরসভার বোর্ড মিটিং সরগররম হয়ে ওঠে। মিটিংয়ে মেয়র বলেন, রেলের অব্যবহৃত জমি রাজ্যের। সেগুলি রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার আর্জি রেলমন্ত্রকের কাছে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক হয়েছে, ওইসব জমিতে ১২ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাসকারীদের পজেশন সার্টিফিকেট দেবে পুরসভা। পাশাপাশি তাঁদের হোল্ডিং নম্বরও দেওয়া হবে। এরপরও রেল জমি ছাড়তে উদ্যোগী না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাব। ওই বস্তিবাসীদের জমির অধিকার পাইয়ে দিতে এই লড়াই চলবে। 

    রেল অবশ্য পুরসভার সিদ্ধান্তকে বেআইনি বলে আখ্যা দিয়েছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, রেলের জমিতে বসবাসকারীদের কেউ পজেশন সার্টিফিকেট, হোল্ডিং দিতে পারে না। এটা পুরোপুরি বেআইনি। তবে রেলের অব্যবহৃত জমি নেওয়ার জন্য মন্ত্রককে আবেদন জানাতে হবে রাজ্য সরকারকে। বিষয়টি পর্যালোচনা করার পর রেলমন্ত্রক থেকে সেই জমি রাজ্যের কাছে বিক্রি করা হতে পারে কিংবা লিজে দেওয়া যেতে পারে। 

    অন্যদিকে, এই ইস্যুতে এদিন বোর্ড মিটিংয়ে একটি রেজুলেশন পেশ করেন সিপিএম কাউন্সিলাররা। তা নিয়ে সভায় আলোচনা না হওয়ায় শেষ লগ্নে চার সিপিএম কাউন্সিলার মিটিং থেকে বেরিয়ে যান। পরে প্রাক্তন মেয়র তথা সিপিএম কাউন্সিলার মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, রেলের জমিতে বসবাসকারীদের পাশে দাঁড়াতেই ওই রেজুলেশন পেশ করা হয়। কিন্তু, শাসকদল বস্তিবাসীদের জমির অধিকার দিতে চায় না। তাই ওই রেজুলেশন নিয়ে বোর্ডে আলোচনা হল না। এ জন্য আমরা সভাকক্ষ ত্যাগ করি। বামফ্রন্ট জমানায় রেলের কাছ থেকে জমি কিনে বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। 

    মেয়র পাল্টা বলেন, রেলের উদ্বৃত্ত জমি রাজ্যকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে একাধিকবার কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কাজেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নতুন করে রেজুলেশন নেব কেন? এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ওরা ওই রেজুলেশন এনেছিল। সুতরাং সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। 

    মেয়র যাই বলুন না কেন শাসকদলের একাংশ সেই রেজুলেশন নিয়ে আলোচনার পক্ষে সওয়াল করেন। তাঁদের বক্তব্য, রেজুলেশনের প্রতিলিপি সকলকে দেওয়া উচিত ছিল। তা হলে আলোচনায় সিপিএমকে জবাব দেওয়া যেত। অহেতুক ওরা ওয়াকআউট করে প্রচার পেল। এদিকে, এদিন মিটিংয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলার অনিতা মাহাত ওয়ার্ড সাফাই করার জন্য শ্রমিকের দাবি জানাতেই মেজাজ হারান মেয়র। পুরসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির অমিত জৈন বলেন, মিটিংয়ে কাউন্সিলারের প্রতি মেয়রের ওই আচরণ কাম্য নয়। সিপিএম কাউন্সিলার মৌসুমি হাজরা বলেন, মহিলা কাউন্সিলারের প্রতি মেয়রের আচরণ বেদনাদায়ক। পরে মেয়র অবশ্য বলেন, ওই কাউন্সিলার আমার মেয়ের সমান। ডেঙ্গু পরিস্থিতির মোকাবিলায় তাঁকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছি। এতকিছুর পরও ওই কাউন্সিলারের বক্তব্য মেনে নেওয়া যায় না।  নিজস্ব চিত্র                             
  • Link to this news (বর্তমান)